এক নজরে যুক্তরাজ্যের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন

আপডেট: জুন ২৮, ২০২৪, ৫:১২ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


দিনকয়েক আগেই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আগামী চৌঠা জুলাই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যা প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে আগে।

অনুমান করা হয়েছিল শরতে (অক্টোবর নাগাদ) ভোট হতে চলেছে বলে, যদিও তা হয়নি।
ভোটের সময়, নির্বাচনি ইস্যু-সহ একাধিক কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন।

ভোটের ময়দানে লড়তে আসা প্রতিদ্বন্দ্বীরা আপাতত প্রচারে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জনতার জরিপে উঠে এসেছে বিভিন্ন ট্রেন্ডও।
এই আবহে দেখে নেওয়া যাক যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়
চলতি বছরের ৪ঠা জুলাই যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ হয় পাঁচ বছরের। গতবারে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি।

নিয়ম মাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনেকে শরতে নির্বাচন হতে পারে এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি।

যুক্তরাজ্য ৬৫০টা নির্বাচনী কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা একজন সাংসদ নির্বাচন করেন যারা তাদের হয়ে ‘হাউস অফ কমন্স’-এ প্রতিনিধিত্ব করেন।

নির্বাচনি ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও ভোটে লড়েন।

সময়ের আগেই কেন নির্বাচন ঘোষণা করলেন ঋষি সুনাক?
জনমত জরিপ অনুযায়ী ২০২১ সাল থেকে ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে।
বিবিসির পলিটিক্যাল এডিটর ক্রিস ম্যাসন বলছেন, “দলের কিছু রাজনীতিবিদ মনে করেন, পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না এবং ভোটারদের মত প্রকাশের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয় আরও খারাপ ভাবে হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”

“এক কথায় বলতে গেলে পরিস্থিতি এমন যে যা করার (নির্বাচন) তা এখনই করতে হবে নয়তো অবস্থা আরও বিরূপ হতে পারে।”
কেন এখন ভোট হওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী ঋষি সুনাক, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরেছেন ক্রিস ম্যাসন।

তার কথায়, “এখন প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দেখাতে পারবেন তার কোনও একটা উদ্দেশ্য অন্তত পূরণ হয়েছে বা আপাতদৃষ্টিতে সেটা হওয়ার পথে।”
“মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে বর্তমান অবস্থাকে তার (ঋষি সুনাকের) সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তবে এটা যে সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে এমনটা নয়।”

“কিন্তু সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া হলে সরকারকেই দোষারোপ করা হয়ে থাকে। তাই আশা করা যেতে পারে যে যখন মুদ্রাস্ফীতির হার কমের দিকে তখন সেই সফলতার ভাগ নেওয়ার চেষ্টা তারা (কনজারভেটিভ পার্টি) করবে। এবং তা কিন্তু ইতিমধ্যে হয়েওছে।”
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “বৃহত্তর অর্থনৈতিক চিত্রটাও কিছুটা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।”

কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে?
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকেই মি. সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে।

আসলে ছবিটা কিন্তু গত ১২ মাস ধরে প্রায় একই ছিল। জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ধারাবাহিকভাবে ৪০% এর উপরে এর উপরে জনসমর্থন পেয়ে এসেছে।
এখন এমনটা হতেই পারে যে জনমত জরিপ সঠিক নয়। ঋষি সুনাকও আশা করবেন নির্বাচনি প্রচার এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সাম্প্রতিক সাফল্য এবং দলের বিষয়ক সিদ্ধান্ত কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারবে।

মুদ্রাস্ফীতির হারে হ্রাস ও তার দলের নীতির উপর মনোনিবেশের মতো ইস্যু নির্বাচনি ময়দানে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশাবাদী।
যদিও বিষয়টা আপাতত যা দাঁড়িয়েছে তাতে লেবার পার্টি উল্লেখযোগ্য ‘লিড’ নিয়েই তাদের প্রচার শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

ফঠজরিপ অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত অভিবাসন বিরোধী ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের সমর্থন সারা দেশে সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে সেই সমর্থনকে সংসদের আসনে পরিণত করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য দিকে, লিবারল ডেমোক্র্যাটস – যারা আগে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল ছিল তারা জরিপ অনুযায়ী ভোটের নিরিখে গড়ে প্রায় ১০%-এ মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে রয়েছে।
তাদের টার্গেট করা আসনে মনোনিবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে ভাল ফলের বিষয়ে আশাবাদী লিবারল ডেমোক্র্যাটস।
ঋষি সুনাকের ‘রোয়ান্ডা নীতি’র কী হবে?

যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই কিছু আশ্রয়প্রার্থীদের রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তিনি।

মি. সুনাকের যুক্তি ছিল এই নীতি বাস্তবায়িত হলে তা ছোট ছোট নৌকায় চেপে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢুকে পড়ার ঘটনাকে ঠেকাবে।
কিন্তু প্রত্যাশিত সময়ের আগেই সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করার পর মি. সুনাক জানিয়েছেন আগামী চৌঠা জুলাই যদি তিনি পুনর্র্নিবাচিত হন তাহলে শুরু হবে এই প্রকল্প।

এদিকে, লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ক্ষমতায় এলে এই পরিকল্পনা বাতিল করা হবে। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কাউকে রোয়ান্ডায় পাঠানো হবে কি না।

ইতিমধ্যে ‘রোয়ান্ডা নীতি’র পিছনে ২৪ কোটি পাউন্ড (৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার) ব্যয় করা হয়েছে।
ছয় সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারে এই নীতিকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের দুটো প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে বিভাজন রেখা বেশ স্পষ্ট।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?
বর্তমানে যে দুই দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে তারা হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি।
৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী মি. সুনাক।

শুধু তাই নয়, তার হাত ধরেই এই প্রথমবার কোনও ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।
২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি।

এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন মি. স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
নির্বাচনের আগে সংসদের চিত্র
নির্বাচনের আগে সংসদ ‘ডিসলভ’ করার বা ‘ভেঙে দেওয়ার’ জন্য রাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী বৃহস্পতিবার সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এর ফলে পদমর্যাদা হারাবেন এমপি বা সাংসদরা।

পদে থাকতে চাইলে আবার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হিসাবে তাদের ভোটের প্রচার চালাতে হবে।
শতাধিক সাংসদ ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এই সময় সরকার একটি প্রাক-নির্বাচনী অবস্থায় প্রবেশ করে, যা প্রচার চলাকালীন মন্ত্রী ও বিভাগীয় কার্যকলাপকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
ভোটের ফল ঘোষণার পরের পদক্ষেপ
ভোট গণনার পর যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এমপি (সাংসদ) রয়েছে সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠন করার জন্য আহ্বান জানান রাজা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংসদ থাকা দলের নেতাই হন সংসদে বিরোধী দলনেতা।
যদি কোনও দলই সাংসদের নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে সেই দল নিজেদের সাংসদদের উপর নির্ভর করে আইন পাশ করতে পারে না। এর ফলে ‘হাং পার্লামেন্ট’ বা ত্রিশঙ্কু অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্য দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের।
অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসাবে কাজ করতে পারে।কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কোনও আইন পাশ করার সময় তাদের অন্য দলের ভোটের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version