‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন

আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২৩, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

শব্দদূষণ বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি আইনও প্রয়োগ করতে হবে

রোববার (১৫ অক্টোবর) সারাদেশের মতো রাজশাহী নগরীতে শব্দদূষণ নিয়ে সচেতনতা গড়তে ‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কারণ-অকারণে যে যখন পারছে শব্দদূষণ করেই চলছে। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘শব্দদূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি’ সেøাগানকে সামনে রেখে এক মিনিট হর্ন না বাজানোর কর্মসূচি পালন করেন। আবার প্রচারণার অভাবে অনেকই এ কর্মসূচি পালনই করেনি। তাই প্রতিকী হলেও এই কর্মসূচি পালনে আমরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই এক মিনিটের জন্যও হর্ন বাজানো বন্ধ করা যায়নি। শব্দদূষণ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। যেসব উৎস ও জায়গায় শব্দদূষণ হয়। সেখানে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। আমাদের দেশে শব্দ দূষণকারীর সংখ্যা এত বেশি যে, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হলে সারা দেশের কারাগারে ঠাঁই হবে না। আমরা বলতে চাই, কোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইন প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়। মানুষ যখন দেখে যে, অন্যায় করে পার পাওয়া যায় না। তখন তারা অপরাধ থেকে নিবৃত্ত থাকে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না বলেই দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের সামনেই দিনদুপুরে শব্দসীমা লঙ্ঘন করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। শব্দদূষণ বন্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে।

কারণ স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুযায়ী, শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী, মানুষের জন্য ঘরের ভেতর শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল। ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। অথচ রাজধানী ঢাকায় এ মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) প্রকাশ করা এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

দেশের সকল বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, সড়কে যানজটকালে যানবাহন থেকে হর্ন বাজানো, উড়োজাহাজ, ট্রেন, শিল্পকারখানা, বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ, উচ্চস্বরে মাইক বাজানো ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ড সৃষ্ট শব্দ। অথচ শব্দদূষণকে বলা হচ্ছে নীরব ঘাতক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দদূষণ ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের করা এক জরিপে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণের প্রভাবে মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত তো হবেই, পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাজে মনোযোগী হতে না পারা, কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করাসহ হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে। দেখা দিতে পারে উদ্বেগজনিত সমস্যাও। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার হওয়া শিশুদের মনোযোগ দেয়া ও পড়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। অতিরিক্ত হর্নের কারণে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে পারে। তাই আমাদের নিজেদের জন্য হলেও সবাইকে সচেতন হতে হবে। সেই সাথে প্রশাসনকে শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে। তা-হলেই শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা অনেকটা সম্ভব হবে।