এমপি পুত্র রাসেল মেয়র থেকে এবার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী! প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

গোলাম হাসানায়েন রাসেল। ছবি: সংগৃহিত।

শাহীন রহমান, পাবনা:


পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং পাবনা জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মো. মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেল এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন।

দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রাসেল ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি ইতোমধ্যে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এ নিয়ে উপজেলার নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে এমপি ও তার ছেলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কা ভোটার ও নেতাকর্মীদের।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা আ’লীগের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, নিজ উপজেলার রাজনীতি নিজেদের কবজায় রাখার জন্য আ’লীগের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন তার বড় ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেলকে প্রথমে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র এবং পরে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। ছোট ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলকে করেছেন উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

এবার বড় ছেলে রাসেলকে পৌর মেয়র থেকে সরিয়ে করতে যাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আর ছোট ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলকে পৌরসভার মেয়র করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একটি সূত্রের দাবি, এমপি পুত্র ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় আর কেউই প্রার্থী হতে সাহস পাচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দিতে ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এমপি মকবুল হোসেনের সমর্থনেই তাঁর বড় ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং জেলা আ’লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. বাকিবিল্লাহ বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমপির ছেলে যেখানে প্রার্থী হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন কোনোভাবেই প্রভাবমুক্ত হবে না। আমি এ কারণে প্রার্থী হচ্ছি না।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন বলেন, ‘এসব বলে কী লাভ বলেন। দলের নির্দেশনা খোদ এমপি সাহেব মানেন না। নিজের ছেলে রাসলেকে প্রথমে মেয়র করেছেন। তারপর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান বানাবেন, তারপরের টার্গেট এমপি। এ নির্বাচন কোনোভোবেই স্বচ্ছতা থাকবে না। এমপির প্রভাবে কেউ প্রার্থী হবে কি না সন্দেহ।’

এমপি কিভাবে ছেলেকে নির্বাচিত করেছেন বা করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে লোকমান হোসেন বলেন, ‘তার ভয়ে কোনো নেতা কিছু বলে সাহস পায় না। নেতাদের ডেকে এমপি বলে দেন, তোমরা লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার ছেলেকে তোমাদের জন্য চাইবে। ব্যাস, এক দুইশো মোটরসাইকেল নিয়ে নেতাকর্মী তার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলেকে প্রথমে মেয়র হিসেবে চান, তিনি অনুমতি দেন। এবারও একইভাবে ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার অনুমতি দিয়েছেন। এটা তার কৌশল।’

চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ও কৃষকলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেছবাহুর রহমান রোজ বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে ট্রাকের নির্বাচন করেছিল তাদেরকে হুমকি ধামকির উপর রেখেছেন এমপি পুত্র। নেতাকর্মীদের মাঝে একটা আতংক তৈরি করেছেন। এখন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সেই আতংক ধরে রেখে। ইতোমধ্যে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক অনেক নেতাকে তারা বসিয়ে দিয়েছেন। আমাকেও বসানোর নানারকম পাঁয়তারা চলছে। আর এমপির কারণে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আশা করা যায় না। তারপরও যেমনই হোক আমি নির্বাচন করবো।’

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী ও চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন,‘জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছি। মেয়র হওয়ার সময়ও জনগণ চেয়েছিল। উপজেলার মানুষ আমার বাবার কাছে গিয়েছিলেন। তিনি উপজেলা ও পৌরসভার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসছিলেন। তাদের সবার সম্মতিতে আমাকে প্রার্থী হতে হচ্ছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, ‘আমরা জনগণ নিয়ে থাকি। তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে চলতে হয়। মানুষ আমার কাছে ভাল কিছু যদি পেয়ে থাকে, আর অন্য কাউকে না পায়, তাহলে তো আমাদেরই বেছে নেবেই। যদি কেউ নিজেকে যোগ্য মনে করেন তিনি প্রার্থী হবেন। কোনো বাধা নেই। আর নির্বাচনে এমপির প্রভাব বিস্তার থাকবে না। তিনি এমন রাজনীতি করেন না।’

এ বিষয়ে পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন বলেন, ‘উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন আর এবকটি পৌরসভার হাজার বারোশো নেতাকর্মী ইদের আগের রাতে আমার বাড়িতে এসে দাবি করে রাসেলকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করে। আমি বাধ্য হয়ে তাদের অনুমতি দিয়েছি। এর আগে একইভাবে তাকে মেয়র করেছিল। এখানে আমার কোনো প্রভাব নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমপি মকবুল বলেন, ‘ছোট ছেলে শাকিল মেয়র নির্বাচন করুক এটা চাই না। কারণ আমাদের সংসার আছে। সবাই রাজনীতি করলে সংসার চালাবে কে। নিজের ছেলেদের কারণে অন্য ত্যাগী নেতারা বঞ্ছিত হচ্ছে কি না চানতে চাইলে তিনি বলেন, কে বঞ্চিত হচ্ছে, কে হচ্ছে না, তা আমার দেখার কিছু নাই। উপজেলাবাসী এসে তাকে নিয়ে গেছে। আর রাজনীতিতে বঞ্চিত শোষিত বলে কিছু নেই। কেউ যদি তাকে যোগ্য মনে করে জনগণই তাকে বেছে নিবে।’

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে পাবনা-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমপির সমর্থনপুষ্ঠরা ইতোমধ্যে এমপি’র ছবিসহ পোস্টার লাগিয়ে দোয়া চেয়েছেন। ২১ এপ্রিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ