ওজন ছাড়াই দরপত্রের মালামাল সরবরাহ করলেন সাইলো সুপার

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪, ৮:৪১ অপরাহ্ণ


আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি:মূলত, সরকারি দপ্তরের কোনো সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুপযোগী হলে সরাসরি বিক্রির নিয়ম নেই। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহারের অনুপযোগী মালামাল মূল্য নির্ধারণসহ বিভিন্ন নিয়মাবলী জুড়ে দেয়া হয় দরপত্রে। তারপর ডাকা হয় নিলাম। তবে বগুড়ার সান্তাহার সাইলোতে দেখা গেছে ঠিক তার উল্টো চিত্র। যথাযথ মানা হয়নি নিয়ম। দরপত্র হওয়া অকেজো ১৯ প্রকারের মালামাল সাইলো অধীক্ষের কার্যালয় থেকে কোনো প্রকার ওজন ছাড়াই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। অভিযোগ সাইলো সুপার শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের ক্ষমতা বলে ওই সকল মালামাল সরবরাহ করেছেন। সরকারি ওয়েব সাইটে তাঁর পদবী দেওয়া আছে রক্ষণ প্রকৌশলী ও আহরণ ও ব্যয়ন কর্মকর্তা।

গত মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সাইলো কর্মকর্তার নির্দেশে দরপত্রের অনুযায়ী ১৯ প্রকার যন্ত্রাংশের আনুমানিক ৮টনের মতো মালপত্র সরবরাহের কথা থাকলেও সেখানে কোনো রকম ওজন ছাড়াই গুদামে দশ বছরের জমাকৃত প্রায় ৩৫-৪০টন মালপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। যা তিনি নিজের ইচ্ছে মতো করেছেন বলে একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ। এ খবর জানাজানি হলে বিষয়টি টক অব দ্যা শহরে পরিণত হয়। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহবান জানান স্থানীয়রা। তিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশ করে একক ক্ষমতা বলে এসব করেছেন বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ।

সান্তাহার সাইলোর অকেজো প্রায় দশ বছরের আগের মালামাল বিক্রির অনুমোদন নেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সেই মালামালগুলো সম্প্রতি একটা দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার ৫৮৫ টাকায়। সান্তাহার সাইলো অধিকক্ষের কার্যালয়টি খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন। অথচ খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, দিনরাত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনিয়ম বন্ধ করতে, দিচ্ছেন কঠোর হুশিয়ারি। সেখানে দুই এক জন কর্মকর্তার এধরনের কার্যক্রম খাদ্য অধিদপ্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এমনটাই মনে করছেন সচেতনরা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সম্প্রতি সান্তাহার সাইলোর অকেজো যন্ত্রাংশ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে দরপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই দরপত্রে জিআই পাইপ কেজিতে, জিপ গাড়ির ব্যাটারী সংখ্যায়, স্ক্যাপ ম্যাটেরিয়াল, কলভেয়ার বেল্ট, বাঁশ ও কাঠ টন হিসেবে এবং আরও প্রায় ১৯ প্রকার মালামাল কেজি বা টন অথবা সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব মালপত্রের দর ধরা হয় মাত্র ৯৫ হাজার ৫৮৫ টাকা। দরপত্রের মাধ্যমে মালামালগুলো ক্রয় করেন ঠিকাদার রেজাউল করিম ডাবলু। তিনি বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগের ৫নং ওয়ার্ড শাখার সাধারন সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর। গত মঙ্গলবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মালপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার পক্রিয়া শুরু হয়।

কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করে ওজন ছাড়াই দরপত্রের হওয়া এসব অকেজো মালামাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে সাইলো অধীক্ষকের কার্যালয়ের সুপার শাহারিয়ার মো. সালাউদ্দীনের বিরুদ্ধে। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ট্রাকে মালামাল লোড করার জন্য তাদের নিজস্ব শ্রমিক নিয়ে আসেন সংরক্ষিত এলাকায়। যা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় সাইলোতে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে। এরপর স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে মালামাল লোড করে ট্রাকযোগে এসব মালপত্র বিশেষ পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যান স্বয়ং ঠিকাদার রেজাউল করিম ডাবলুসহ আরও কয়েকজন।

এদিকে ওজন ছাড়াই দরপত্রের মালামাল হস্তান্তর হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেও সাইলোর অধীক্ষক শাহারিয়ার মো. সালাউদ্দীন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে দেখা করতে রাজি হননি। এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীদের সাইলোর ভিতরে প্রবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইলোর এক কর্মকর্তা জানান, নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খালি ট্রাক প্রথমে পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে (স্কেল) ওজন করতে হবে। এরপর ঠিকাদারকে মালপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মালভর্তি ট্রাক ফের ওজন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে হস্তান্তর করতে হবে। সে নিয়ম অনুযায়ী সাইলোর একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি সুপারকে ট্রাকটি ওজন করে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি (সাইলো অধীক্ষক) ওজন ছাড়াই মালপত্র সরবরাহ করেন।

জানতে চাইলে সহকারী সাইলো অপারেটিভ মাসুদ রানা ওজন করে সরবরাহ করা হয়নি স্বীকার করে বলেন, দরপত্রের আনুমানিক ওজন অনুযায়ী মালপত্রগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রথমে ১৯ প্রকারের হলেও পরবর্তীতে ১৮ প্রকারের মালপত্র দরপত্র অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। অতিরিক্ত মালামাল দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তালিকা অনুযারী দশ বছর আগের ওইসব অকেজো মালপত্রই সরবরাহ করা হয়েছে। আর বর্তমানে নতুন করে যেসব মালপত্র জমা হয়েছে সেগুলো গুদামে সংরক্ষণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংরক্ষিত এলাকায় বাহিরের শ্রমিক ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যক্তিগত শ্রমিক নিয়ে আসলেও পরে আমাদের কথায় সাইলোর কয়েকজন শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন।

একই ভাবে অকেজো মালামাল ওজন করা হয়না জানিয়ে সাইলো অপারেটিভ সঞ্জয় কুমার জানান, কমিটি যে দরপত্রের মালামালগুলো দেখিয়ে দিয়েছিল সেগুলোই সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া এই বিষয়টি অনেকেই জানাজানি হয়েছে। অনেকদুর গড়িয়েছে। অধিদপ্তর ও মিনিস্ট্রি থেকে ফোন দিয়েছিল। ওনাদের কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু লোক তিলকে তাল করার চেষ্টা করছে।
ঠিকাদার রেজাউল করিম ডাবলু বলেন, ‘নিয়মের বাহিরে আমি মালপত্র নিতে পারবো না। দরপত্র অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মালামালগুলো বুঝিয়ে নিয়েছি।’

ওজন ছাড়াই সরবরাহের বিষয়টি জানতে চাইলে সান্তাহার সাইলো অধীক্ষক কার্যালয়ের সুপার শাহারিয়ার মো. সালাউদ্দীন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কাজী সাইফুদ্দীন জানান, দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আরসি ফুড অনুমোদন দিয়েছে। দরপত্রে সংখ্যার মালপত্রগুলো সংখ্যায় আর ওজনের মালপত্র ওজন করেই নিতে হবে। দরপত্র বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি রয়েছে, সেই কমিটি মালপত্রের তালিকা করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি (সাইলো অধীক্ষক) যদি মালপত্রের আলাদা তালিকা করেন সেটি আমার জানা নেই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ