জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আদিবাসীরা সংকট তুলে ধরে লোকনৃত্য পরিবেশন

আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ১০:২৪ অপরাহ্ণ


সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:


বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কোষ্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভার্মেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক এবং পরিবর্তন রাজশাহীর যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজশাহীতে ‘কপ-২৮’ সম্মেলনকে সামনে রেখে বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর নব্বাাইবটতলা এলাকায় এ সময় আদিবাসী মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের সংকট তুলে ধরে লোকনৃত্য পরিবেশন করেন। এসময় বক্তব্য দেন আদিবাসী নেত্রী কস্তানতিনা হাসদা, পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন ও সোমা হাসান।

বক্তারা বলেন, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকাঠামো সনদ (UNFCCC)-এর উদ্যোগে ‘কপ-২৮’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনের মূলত ‘জলবায়ু সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রীয় পক্ষসমূহের সম্মেলন’ (Conference of Parties) বা ‘কপ’ হলেও সাধারণভাবে ‘জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন’ নামে পরিচিত। ১৯৯২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনে জাতিসংঘ জলবায়ু সনদ গৃহীত হবার পর ১৯৯৫ সালের মার্চে জার্মানির বার্লিন শহরে প্রথম সম্মেলন কপ অনুষ্ঠিত হয়।

পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান, বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রধান, বিজ্ঞানী, জলবায়ু-অধিকারকর্মী, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এ সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন। এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের কারণে শক্ত ও ঋজু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আবার, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অধিকাংশ সিদ্ধান্তই যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয় না।

এ জন্য ‘ঐচ্ছিক সমঝোতা নয়, আইনগত চুক্তি চাই’ দাবীতে পরিবেশবাধীরা আন্দোলন করছে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী অতিরিক্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও জাপানসহ ৪৩টি দেশ পৃথিবীর সবথেকে বেশি ঐতিহাসিক নির্গমনকারীদের কাছ থেকে জলবায়ুর ক্ষতির জন্য নায্যতা পাওনা এবং কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার দাবী জানানো হয়।

এ সময় ১১দফা দাবীনামা তুলে ধরা হয়। দাবীনামা গুলো হলো-১. ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ নয়, প্রকৃত’ ‘শূন্য নির্গমন’ নিশ্চিত করতে হবে।

২. উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ নির্বিশেষে ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পখাতে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্বন ধারণ ও সংরক্ষণ (Carbon Capture and Storage) বা সিসিএস প্রযুক্তি ব্যবহারের দোহাই দেয়া যাবে না।

৩. জীবাশ্ম গ্যাস (এলএনজিসহ) ও পেট্রোলিয়ামে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সরবরাহ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। রূপান্তরকালীন জ্বালানির নামে এলএনজি’র সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে।

৪. স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিপদাপন্ন জনসাধারণের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সরাসরি অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে।

৫. এলএনডি তহবিলে ঋণ কিংবা বেসরকারি বিনিয়োগ নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এলএনডি তহবিলে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬. বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত ও ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে এবং সহজ অর্থায়নের মধ্য দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে হবে।

৭.শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে জিসিএফ-এ প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার দিতে হবে যাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু-ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত হয়।

৮. জিসিএফ থেকে চরম বিপদাপন্ন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অভিযোজনে অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এছাড় এসব দেশে জ্বালানি খাতে ন্যায্য রূপান্তরে অর্থায়ন করতে হবে।

৯. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ‘জলবায়ু উদ্বাস্ত’ ঘোষণা করে স্বাধীন ও সম্মানজনক অভিবাসনের অধিকার দিতে হবে।

১০. ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মিথেন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষিখাতকে এ লক্ষ্যমাত্রার বাইরে রাখতে হবে। এবং

১১. শিল্প, পরিষেবা ও বাণিজ্যসহ সকল খাতে সবুজ রূপান্তরের জন্য স্পষ্ট ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করার দাবী রয়েছে ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ