নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি

আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

সংলাপে সমাধান সম্ভব করতে হবে

দেশের চলমান উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাবনা সামনে এসেছে। কূটনৈতিক পাড়াতেও সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশাও একটা গ্রহণযোগ্য সংলাপ অনুষ্ঠানের। দেশের মানুষের কাছে জ্বালাও-পোড়াও আর হত্যার রাজনীতি মোটেও প্রত্যাশিত নয়। বরং তারা রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই চায়।

বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকার পতনের এক দফা আন্দোল চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে দেশের সংবিধানের নিরিখেই দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের প্রসঙ্গটি বারবার এসেছে- কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব বারবারই তা নাকচ করে দিয়েছে। ফলে রাজনীতিতে নতুন উপায় অনুসন্ধান করাও সম্ভব হয়নি।

২৮ অক্টোবর থেকে রাজনীতিতে সন্ত্রাস-সহিংসতা ফিরে এসেছে। আবারো সেই পুরানো স্টাইলে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, হত্যার মত ঘটনা ঘটছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে যেমন, তেমনি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের বাস্তবতায় এই পরিস্থিতি অনাকাক্সিক্ষত। বিএনপি ও তার শরিকরা যে সহিংসতার পথে এগোচ্ছে তাতে ফলাফল দেশের জন্য মোটেই ভাল কিছু হবে না, এটা পরিষ্কার।

মাসচারেক ধরেই দেশের রাজনীতি নিয়ে নাক-গলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তারাও কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে একরকম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন আরোপ করেছে। এই কূটনীতিকরাও ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে। কেননা তারা এরই মধ্যে বিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও প্রত্যক্ষ করেছে। তারা তাদের একপেশে অবস্থান থেকে ভিন্ন কৌশলে এগোতে চাইছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস মঙ্গলবার বলেছেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সংঘাতের কোনো স্থান নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন শর্তহীন রাজনৈতিক সংলাপ।

পিটার হাসের এই বক্তব্য বিএনপিকে অনেকটাই বিব্রত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ তা ঠেকাতে পারবে না। খুনিদের সাথে কোনো সংলাপ হবে না। কিন্তু সরকার একদিন পরেই সংলাপের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরা যে কোনো আলোচনায় রাজি আছি, তবে সেটা সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে।’ নির্বাচন কমিশনও সংলাপের পথেই হাঁটছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ৪ নভেম্বর ফের দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এজন্য অন্যান্য নিবন্ধিত দলের পাশাপাশি বিএনপিকেও আলোচনায় অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ সংলাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টতই। সংলাপ উপেক্ষা করার অর্থই হবে নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে পিছিয়ে পড়া। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নতুন ধারার সৃষ্টিও সময়ের দাবি। রাজনীতিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পুরানো ধ্যান-ধারণা থেকে রাজনীতিকে উদ্ধার করাই হোক জাতীয় রাজনীতির উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই এটা সম্ভব হবে।