পাবনায় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকার অনিয়ম. অগ্রণী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা কারাগারে

আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ণ

শুক্রবার দুপুরে পাবনার সাঁথিয়া থানায় পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত অগ্রণী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা

শাহীন রহমান, পাবনা:


অগ্রণী ব্যাংক পাবনায় সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর শাখা থেকে খোয়া গেছে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বিপুল এই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ব্যাংকটির কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপকসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে তাদের ব্যাংক থেকে আটক করা হয়। পরে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেলা তিনটার দিকে তাদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

পাবনায় গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত তিন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন, শাখা ব্যবস্থাপক পাবনার সুজানগর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের আব্দুল সালাম মন্ডলের ছেলে হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার একই জেলার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের সুশীল ঠাকুরের ছেলে সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের জাহান আলীর ছেলে আবু জাফর।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের বরাত দিয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তাঁর ভাষ্য মতে, অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিদর্শন টিম নিয়মিত পরিদর্শণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর শাখা পরিদর্শণে যান। সেখানে টাকার হিসাব গ্রহণকালে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার অনিয়ম ধরা পড়ে। ওই শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফর পরিদর্শণ টিমকে টাকা খোয়ার যাওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় তাদের তিনজনকে অভিযুক্ত করে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ দেন অগ্রণী ব্যাংক পাবনা জোনাল অফিসের প্রধান ও ডিজিএম রেজাউল শরীফ। পরে পুলিশ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক করে।

পাবনায় সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, এত বড় অনিয়মের পর অভিযুক্তরা যেকোনো সময় দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারে-এমন অভিযোগ করে পুলিশের সহযোগিতা চায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এজন্য তিনজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে। সেই জিডি মুলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাদের তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আর আর্থিক সংশ্লিষ্ট অনিয়ম হওয়ায় এ বিষয়ে মামলা দায়েরসহ পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেবে দুদক। পরে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেফতারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়নি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় পাবনায় কাশিনাথপুর শাখা পরিদর্শণে আসা অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পরিদর্শণের অংশ হিসেবে ওই ব্যাংকে গিয়ে টাকার বড় রকমের অনিয়ম পায়। তারা তিনজন টাকার হিসাব দিতে পারেননি। আবার ব্যাংকের ভল্টেও ওই পরিমাণ টাকা কম ছিল। তাই তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পুরো ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে দেখবে কিভাবে কি কারণে এতে টাকা খোয়া গেছে এবং এর সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না।

এদিকে, শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে টাকা খোয়া যাওয়ার প্রকাশের পর সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জানতে পেরে ব্যাংকটি গ্রাহক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পাবনায় ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কাশিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আনসার আলী। তিনি বলেন, আমার একাউন্ট না থাকলেও, স্ত্রীর একটি সঞ্চয়পত্র আছে। সকালে টাকা চুরির খবর শুনেই আসলাম। এত টাকা কিভাবে হাওয়া হয়ে গেলো বুঝতিছি না। এখন তো ভয় হচ্ছে।’

পাবনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, এটি খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা ভাবতেই পারছি না এত বড় আর্থিক অনিয়মের ঘটনা। এরকম হলে তো মানুষ ব্যাংক থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাই।

ব্র্যাক এনজিও কাশিনাথপুর শাখার ম্যানেজার জাফর ইকবাল বলেন, টাকাতো একবারে খোয়া যায়নি মনে হচ্ছে। দিনে দিনে টাকা চুরি হয়েছে। এর পেছনে আরো রাঘব বোয়াল থাকতে পারে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা দরকার। তা না হলে ব্যাংকটির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরবে না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ