পুুঠিয়ায় খেজুর গুড়ের রমরমা ব্যবসা শুরু

আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ১১:২৭ অপরাহ্ণ

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি:


কমছে তাপমাত্রা, উঁকি দিচ্ছে শীত। এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ততা হয়ে পড়েছে গাছিরা। প্রতিদিন ভোরে তারা বেরিয়ে পড়ছেন রস সংগ্রহে। পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন গ্রামে ইতোমধ্যে গাছ তোলার কাজ শেষ হয়েছে। নলেন গুড় ও পাটালি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শীত কম থাকলেও আগাম গুড় ও পাটালিতে দাম ভাল পাওয়া যায় বলে এলাকায় পাটালি গুড় তৈরির ধুম পড়েছে।

উপজেলার বানেশ্বর, বেলপুকুর, ভালুকগাছী ও ঝলমলিয়ায় প্রচুর সংখ্যক খেজুর গাছ লক্ষণীয়। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবেও খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। শীতের সাথে খেজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ে।

এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় ভাপা পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের মতো জুড়িই নেই।

পুঠিয়া উপজেলার ধলাট এলাকার গাছি সোহাগ জানান, তার লিজ নেওয়া ও নিজেরসহ প্রায় ৬০ টার মত খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় বানেশ্বর হাটে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে এসব গুড় পাটালি কিনে নিয়ে যায়। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন। এবছরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

ছান্দাবাড়ীর আব্দুল মমিন ও মাড়িয়া এলাকার লুৎফর রহমান বলেন, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় হাটে গুড় বিক্রি করেন। এবার খেজুর গুড় ও পাটালির দাম ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বলে তারা জানান। তবে কিছু অসাদু গাছী ও মালিকরা গুড় তৈরিতে ব্যবহার করছে চিনি। গুড়ের কালার এবং দানা তৈরির জন্য কিছু লোভি অসাধু লোক গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। এতে করে সঠিক মানের গুড় পাচ্ছেনা ক্রেতারা। তবে একটি বড় অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইনের মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক গুড় বেচাকেনা হয় বলেও জানান।

জ্বালানিসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবছর দাম বেশি থাকলেও লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে যাবে বলে আসা গাছ মালিকদের। ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরিবারের সবাই রস জালানো, কলস পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আবার দুপুরেই গাছিরা বাটাল, হাসুয়া, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে।

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার জানান, এবছর উপজেলায় ২শত ৭০ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এবং উৎপাদন লক্ষমাত্রা প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। তবে শীত যত বাড়বে উৎপাদন তত বেশি হবে এবং শীত কম হলে উৎপাদন আরও কমে যাবে। তবে গাছ মালিকরা সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা না করায় খেজুর গাছ আজ বিলপ্তির পথে।