বিলুপ্তপ্রায় ঢেঁকি, নেই নবান্ন ঊৎসব

আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ৪:১৮ অপরাহ্ণ


মোস্তফা কামাল, মোহনপুর :


কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেকির ব্যবহার বিলুপ্তপ্রায়। অগ্রায়ণ-পৌাষে গ্রামাঞ্চলের কৃষক পরিবারে চলতো নবান্নের পিঠা উৎসব। এখনও গ্রামের বাড়িতে ধান ওঠে কিন্তু এধরনের উৎসবগুলো দেখা যায় না। চোখে পড়ে না ঢেঁকির ব্যবহার। গ্রামীণ জীবনে ঢেঁকির শব্দে ভোরের ঘুম ভাঙতো গ্রামের মানুষের।

আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ধান ভানা, আটা কোটা, গম ভাঙা সবকিছুই চলছে মেশিনের সাহায্যে। প্রবাদ রয়েছে ঁেঢকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে! স্মৃতিময় এ প্রবাদটি সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় চালিয়ে আসছেন গ্রামীণ নারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢেঁকির ব্যবহার বহু পুরাতন। আগের দিনে কৃষি শস্যাদির অধিকাংশই ভাঙা হতো ঢেঁকির সাহায্যে। ঢেঁকিতে পাড় দেয়ার সময় ধান ভানার গান। ঘরে ঘরে উঠতো নতুন ধান। মাড়াই শেষে ধান ঢেঁকিতে ভেনে চাল আর চাল থেকে তৈরি হতো আটা।

এই আটা দিয়েই তৈরি হতো, ভাপা পিঠা, রসপিঠা, পুলি পিঠা, পায়েসসহ নানা ধরনের সুস্বাদু পিঠাপুলি। আগের দিনে শীতের সকালে আনন্দে ভরে উঠতো গ্রামীণ জীবন। এখন নেই এসব আয়োজন, নেই ঢেঁকির ব্যবহার। ঢেঁকি উঠেছে গোহাল ঘরে আর উৎসব স্থান পেয়েছে কাগজ-কলম ও সাইনবোর্ড ব্যানারে।

এসব কিছুর মধ্যে গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মৃতিময় ঢেঁকির ব্যবহার কিছুটা ধরে রেখেছে মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের বেলনা, বড়াইল, মেলান্দি গ্রামের সৌখিন পিঠা খাদক মানুষরা। এখানে এখন পর্যন্ত সকাল হলেই অধিকাংশ বাড়িতেই পিঠা-পুলির আয়োজন দেখা যায়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে এবং মোড়ে বসে ভাপা পিঠা বিক্রির দৃশ্য এখনও পথিকদের শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

উপজেলা বড়াইল গ্রামের আল মাহমুদ শুভ জানিয়েছেন, এখন ধান ভানা, আটা কোটা সবকিছুই হয় মেশিনে। এজন্য কমে গেছে ঢেঁকির কদর। মানুষ অনেকটাই ব্যস্ত সময় কাটায় বলে পিঠা পায়েস বানানোর চাহিদাও কমে গেছে। অগ্রহায়ণ মাসে ঘরে ধান ওঠে তবে নবান্ন উৎসবের আমেজ অনেকটাই কমে গেছে। এজন্য আমাদের গ্রামের মানুষ এখন অতীত সংস্কৃতির চর্চা করে।

গ্রামের সালমা, যমুনা, ফাতেমা ও জাহানারাসহ আর নারী জানিয়েছেন অগ্রহায়ণে গ্রামের মানুষদের কাছে পিঠাপুলি খাওয়ার অন্যরকম আনন্দ। আমরা পরিবারের জন্য বহুরূপী পিঠা বানানোর জন্য বাড়িতে রাখা ঢেঁকিতে আটা কুটি। মেশির কুটা চালের আটার তুলনায় ঢেঁকিতে কুটা আটার পিঠার স্বাদ অনেক বেশি। এ কারণের আমরা ঢেঁকির ব্যবহার এখনও ধরে রেখেছি।

কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছি গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম জানিয়েছেন, আগের দিনে আমাদের বাড়িতে ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঢেঁকিতে ধান ভানা, আটা কুটার রীতি ছিল। এখনও ধান ওঠে তবে এসকল উৎসব নেই। এখনকার ছেলে-মেয়েরা ঢেঁকির কথা বলতে হয়তো চিনতেই পারবে না।