ভোটের প্রচারে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন স্ত্রী, মিছিলে স্বামী

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। পৌরসভাটিতে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সবার নজর একমাত্র নারী প্রার্থী রাবেয়া সুলতানা মিতুর দিকে। ভোটের মাঠে তিনি নতুন মুখ হলেও স্বামীর জনপ্রিয়তায় ভর করে ভোটের মাঠে তিনিই হয়ে উঠেছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ভোটারের মন জয় করতে তিনি ঘুরছেন পাড়া-মহল্লার বাড়ি বাড়ি, আর স্বামী আব্বাস আলী করছেন মিছিল।

ভোটের প্রচারে আব্বাস আলী এই পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র। ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তিনি দুইবারই মেয়র হন আওয়ামী লীগের টিকিটে। ঘরোয়া বৈঠকে করা বিতর্কিত এক বক্তব্যের অডিও ছড়িয়ে পড়লে তিনি দলীয় পদ হারান। আর এই অডিও নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে মেয়রের পদও হারান তিনি। আর তাই এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আব্বাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতু ভোটের মাঠে এসেছেন সবার পরে। কিন্তু পৌর এলাকায় সবার চেয়ে বেশি আলোচনা তাকে ঘিরেই। প্রচার-প্রচারণা আর জনসমাবেশেও এগিয়ে তিনি। শুক্রবার বিকাল থেকে মিতু পাড়া-মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিজের ‘হ্যাঙ্গার’ প্রতীকের লিফলেট তুলে দিয়ে আসেন। পৌরসভাকে এগিয়ে নিতে ভোট চান এই প্রতীকে।

আর এ দিন বিকালে কাটাখালী বাজারে বিশাল মিছিল বের করেন তাঁর স্বামী আব্বাস আলী। মাসকাটাদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে মিছিলটি বের করা হয়। কাটাখালী বাজার প্রদক্ষিণ শেষে আবার একই স্থানে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলে ছিলেন না প্রার্থী রাবেয়া সুলতানা মিতু। স্বামী আব্বাস আলীই মিছিলে নেতৃত্ব দেন। তাঁর কারণেই মিছিলে হাজারো মানুষের ঢল নামে।

মিছিলে স্ত্রী নেই কেন, এমন প্রশ্নে আব্বাস আলী বলেন, ‘তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ে পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন নারীদের সঙ্গে। আর পুরুষদের নিয়ে আমি এই মিছিল করলাম। পৌরসভায় আমার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য পৌরবাসী আমার স্ত্রীকেই নির্বাচিত করবে।’

এই নির্বাচনে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু শামা, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, পৌর জামায়াতের সাবেক আমীর আবদুল হাই, মহানগর জামায়াতের শুরা সদস্য মাজেদুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান, বিএনপির কর্মী জিয়াউর রহমান, সিরাজুল ইসলামসহ আরও সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মিতুকে ঠেকাতে তাঁরা সাতজন ঐক্যবদ্ধও হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিতু এই ভোটের মাঠে লড়াই করছেন।

গত ৮ মার্চ এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় বরখাস্ত করা হয়নি দাবি করে আব্বাস আলী উচ্চ আদালতে রিট করে রেখেছিলেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আব্বাস আলী বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত আট সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিত করেন।

ভোটের প্রচারে তবে আদালতের আদেশের কপি হাতে না পাওয়ায় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যান। এই সময়ের মধ্যে সাতজন প্রার্থী মনোনয়ন তুলে জমা দেন। পরে ৩১ মার্চ নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে জানায়, ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ করা হবে। যে পর্যায় থেকে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল, সে পর্যায় থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।

এ আদেশের বিপক্ষে ২ এপ্রিল সাবেক মেয়র আব্বাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতু উচ্চ আদালতে রিট করেন। তিনি দাবি করেন, ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়ার কথা জেনে তিনি মনোনয়ন ফরম তোলেননি। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়েছেন। এতে অন্য সাতজন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। ২ এপ্রিলই এই রিটের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ার নির্দেশ দেন।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক গত ৮ এপ্রিল রিটার্নিং কর্মকর্তা মিতুর প্রতিনিধির কাছে মনোনয়ন ফরম দেন। এতেই ক্ষুব্ধ হন অন্য সাত প্রার্থী। ৮ এপ্রিল তারা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। তারা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলালকে বলেন, মিতুকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া যাবে না। তারা সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় মিতুর প্রার্থিতা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কিছু করার নেই। এ সময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিকের সামনেই অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলালের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন ওই সাত প্রার্থী। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা চান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। তবে পরে অবশ্য এ নিয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।