মুজিবনগর সরকার দিবস আজ

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার দিবস।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শপথগ্রহণ করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার। শপথগ্রহণের পর থেকেই বৈদ্যনাথতলার নাম হয় মুজবনগর এবং ১৭ এপ্রিল হয় গৌরবের মুজিবনগর দিবস।

নবগঠিত সরকারের রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন, খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র , আইন ও সংসদ), এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প ) এবং এএইচএম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রিদের দপ্তর বণ্টন করা হয়।

এরআগে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল-রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের এদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রীরূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।

একইসাথে প্রবাসী সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে এবং ২৬ মার্চ’এর প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।
এই সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। অভ্যূদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ-এর।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের উপর ভিত্তি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। তাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা, বাংলাদেশকে অস্বীকার করা।

আক্ষরিক অর্থে বা শারীরিকভাবে অনুপস্থিতি অর্থাৎ যুদ্ধের পুরো ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থ্কালেও ফলত এবং আত্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে এবং রণাঙ্গনে সদা সর্বত্র বিরাজমান ছিলেন। তাঁর নামেই সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পাকিস্তানের প্রায় ৯৩ হাজার প্রশিক্ষিত ও মতাদর্শভাবে ধর্মোন্মাদ সেনাসদস্যকে পরাজিত করে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বিজয় অর্জন করার প্রধান অনুঘটক ছিলো মুজিবনগর সরকার।

দিবস উদযাপনের কর্মসূচি
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস বুধবার (১৭ এপ্রিল)। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় সরকারি ছুটি থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দিবস’র কর্মসূচি তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে, সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি’র সূচনা হবে। সকাল ৯ টাই মুজিবনগরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। মুজিবনগরের আম্রকাননে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউটস, গার্লস গাইড ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের গার্ড অব অনার প্রদান এবং বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ১০টায় মুজিবনগরে গীতিনাট্য ‘সোনালী স্বপ্নের দেশ’ প্রদর্শিত হবে। বেলা পৌনে ১১টায় মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুজিবনগর-মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠান শেষে লেজার শো দেখানো ও আতশবাজি করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দেবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেতার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। ঢাকা ও মুজিবনগরে এ দিবস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনে আলোকসজ্জা এবং সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।