রাজশাহীর মিষ্টি পান, টাঙ্গাইলের শাড়ি পেল জিআই স্বীকৃতি

আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীর মিষ্টি পান ও টাঙ্গাইলের শাড়ি পেল জিআই স্বীকৃতি। এছাড়াও গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃতসাগর কলাসহ ১৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এসব পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প, নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনির হাসান এই নিবন্ধন সনদে সই করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজশাহী জেলা প্রশাসনকে সেই চিঠি হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন থেকে রাজশাহীর মিষ্টি পানের জিআই নম্বর হলো ২৮। তা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব সনদ বিতরণ করা হয়।
সনদ পাওয়া ১৪টি পণ্য হলো- টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ি চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার ম-া, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা। এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনই এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্য সাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।

তিনি বলেন, মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখ-ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।

ডিপিডিটি মহাপরিচালক মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।

জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমরা এরই মধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে দিতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি, ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সোনার দেশকে জানান, তিনি রাজশাহীতে এসেই রাজশাহীর মিষ্টি পানের জিআই (ভৌগলিক নির্দেশক) স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন। রাজশাহীর মিষ্টি পান এখন আমাদের হলো। এর সত্ব যেমন আমাদের হলো তেমনি বাইরে রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই পানটার একটা ঠিকানা হলো। তিনি নির্বাচন কমিশনে দাপ্তরিক কাজে আসার কারণে তার পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সনদটি গ্রহণ করেছেন।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আরো জানান, রাজশাহীর পান দেশের অন্য স্থানের তুলনায় মিষ্টি। তাই এর চাহিদাও বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলায় এই মিষ্টি পান ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গড়ে প্রতি হেক্টরে এই পানের ১৭ দশমিক ১২৬ মে. টন ফলন হয়েছে। এই ফসলের সঙ্গে ৩৯ হাজার ১০১ জন চাষি জড়িত রয়েছেন। এই পান রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় বাগমারা উপজেলায়। এই উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এরপরের অবস্থান রয়েছে মোহনপুর উপজেলার। এই উপজেলায় ১ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়।

পান জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী জানান, সর্বপ্রথম জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ স্যার রাজশাহীর মিষ্টি পানকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন। এরই ফলশ্রুতিতে রাজশাহীর মিষ্টি পানের পরিচিতি, সুনাম ও চাহিদা আরও বাড়েছে। এখন থেকে চাষিরাও পানের ভালো দাম পাবেন। এছাড়াও কৃষকরা পানের বাজারজাতকরণের এখন থেকে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ