শব্দের চেয়ে জোরে ছোটে, নাগাল পায় না র‌্যাডার! ইরানের যে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্রকে ভয় পাচ্ছে আমেরিকাও

আপডেট: এপ্রিল ১৪, ২০২৪, ৮:২৯ অপরাহ্ণ

শব্দের চেয়ে জোরে ছোটে, নাগাল পায় না র‌্যাডার! ইরানের যে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্রকে ভয় পাচ্ছে আমেরিকাও

সোনার দেশ ডেস্ক:


আশঙ্কা ছিলই। সেই আশঙ্কা সত্যি করে ইসরায়েলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইরান। আইডিএফ (ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স) সূত্রের খবর, ২০০-এর বেশি ড্রোন দিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার দূতাবাস, ঘাঁটিগুলিকেও।
শুক্রবার জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে হামলা করতে পারে ইরান। গত সপ্তাহেই ইরান বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের কথা প্রকাশ করে যেগুলি লোহিত সাগর পেরিয়ে ইসরায়েলের শহর এবং পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে।

এ বার দুইয়ে দুইয়ে চার হল। ইরান প্রথমে অস্বীকার করলেও শনিবার রাতে ইসরায়েলে হামলা শুরু করে দিয়েছে। ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আইএসএনএ দাবি করেছে, সে দেশের হাতে রয়েছে এমন ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র যা ইসরায়েলে গিয়ে হামলা চালাতে সক্ষম।
এক-একটি ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ঘণ্টায় ৫৬০ মাইল থেকে ১২৪২ মাইল। যে কোনো সময় এগুলির প্রয়োগ করতে পারে ইরান। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এ সব কারণেই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আরও বিপজ্জনক হতে চলেছে।

৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে অন্যতম ‘সেজ্জিল’। নব্বইয়ের দশকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করে ইরান। এর দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার। ওজন ২৩,৬০০ কেজি। ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে পারে। বহন করতে পারে ৭০০ কেজি বিস্ফোরক।
ইরানের তৈরি ‘খাইবার’-ও মধ্যম পাল্লার শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। খোররামশহর শ্রেণির চতুর্থ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র এটি। ১৫০০ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ২,০০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র।
আশির দশকে খোররামশহরে যুদ্ধ হয়েছিল ইরাক এবং ইরানের। সেই শহরের নামেই এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম। আরবে মুসলিমদের খাইবার যুদ্ধের নামে এই খোররামশহর শ্রেণির চতুর্থ প্রজন্মের নাম রাখা হয় খাইবার।

ইরানের অস্ত্রশালায় রয়েছে ‘এমাদ’ ক্ষেপণাস্ত্র। ১৭০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় গিয়ে আঘাত হানতে পারে এটি। বহন করতে পারে ৭৫০ কেজি বিস্ফোরক। উত্তর কোরিয়ার নোডং ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। পশ্চিম এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি রয়েছে এর নিশানায়।
উত্তর কোরিয়ার নোডং-১ ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণে ‘শাহাব-৩’ তৈরি করিয়েছে ইরান। মধ্যম পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ১০০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে। বহন করতে পারে ১,২০০ কেজি বিস্ফোরক। হালকা ওজন নিয়ে আরও দূরের লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র।

বিভিন্ন শহরে গিয়ে অনায়াসে আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। পরবর্তী কালে চিনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এর উন্নতি ঘটানো হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের সেনাবাহিনী পরিচালনা করে না, করে ইসলামিক রেভলিউশনার গার্ড কপ (আইআরজিসি)।
‘শাহাব-৩এ’-তে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ‘গদর-১১০’ বা ‘কাদর-১১০’ তৈরি করেছে ইরান। তরল এবং কঠিন দুই ধরনের জ্বালানিতেই চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ১,৫০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় গিয়ে আঘাত হানতে পারে এটি।

আইআরজিসি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘পাভেহ্’। ১,৬৫০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এটি। এই ক্ষেপণাস্ত্র একাই ইজ়রায়েলের বড় শহরগুলিকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

রানের ভান্ডারে রয়েছে হাইপারসনিক (শব্দের থেকে থেকে দ্রুত ছোটে) ক্ষেপণাস্ত্র। নাম ‘ফাত্তাহ্-২’। এর ইঞ্জিন চলে তরল জ্বালানিতে। ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে। র‌্যাডারে ধরা পড়ার আগেই আঘাত করতে পারে এটি।
মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘খাইবার শেকান’-ও কম যায় না। ২০২২ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রের কথা প্রকাশ করে আইআরজিসি। কঠিন জ্বালানিতে চলে এর ইঞ্জিন। ১,৪০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র।

মধ্যম পাল্লার ‘হজ কাসেম’-ও ইরানের তৈরি অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। র‌্যাডারে ধরা পড়ার আগেই ১,৪০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এটি। ৫০০ কেজি ভার বহনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে আমেরিকার সেনা। তার নামেই এই ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ। ২০২০ সালের অগস্টে ইরান সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলি দিয়েই ইসরায়েলের টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে ইরান, যার ফল হতে পারে মারাত্মক বলেই মনে করছে দুনিয়া।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ