সর্পদংশনে মৃত্যুহার বাড়ছে

আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

চাই, সচেতনতা ও অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ

বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হতেই বেড়ে যায় বিষধর সাপের প্রকোপ। একইসাথে বৃদ্ধি পায় সাপেকাটা রোগির সংখ্যা। অজ্ঞানতা ও অব্যবস্থার কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিষধর সাপের কামড়ে মারা যায়। গ্রামীণ জনপদে প্রায় সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটছে। সাপেকাটা রোগিকে অধিক ক্ষেত্রেই ওঝাদ্বারা চিকিৎসা করা হয়; যার পরিণতিতে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। অথচ সময়মত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা গেলে অনেক মূল্যবান জীবন রক্ষা হয়। এ ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। সব সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ প্রায়ই থাকে না। তখন উপায়ান্তর না পেয়ে সাপেকাটা রোগি নিয়ে ওঝার দারস্থ হতে হয়। ওঝার কাছে নেয়া সাপেকাটা রোগি কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।

চলতি মাসের ৯ অক্টোবর নওগাঁর নিয়ামতপুরে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী এবং ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধকে সাপে কামড়ায়। ঘটনা পৃথক হলেও উভয় ক্ষেত্রে সাপেকাটা রোগিকে প্রথমেই ওঝার কাছে নেয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এবং শিশু ও বৃদ্ধের একই পরিণতি হয়েছে, তারা মারা যান। ওঝার কাছে নিয়ে সময়ের নিকুচি হয়েছে। যখন দংশিতদের হাসপাতালে নেয়া হয় তখন সময় শেষ হয়ে যায়। রোগিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এমন ঘটনার আধিক্যই বেশি। তবুও মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা যায় নি কিংবা সচেতনতা গড়ে তোলার মত কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে- রাজশাহী অঞ্চলের জেলাসমূহে সাপে কাটা রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সাপে কাটা মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও। ২০২৩-এর আট মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক ৫৫৮ জন সাপেকাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। মৃতদের অধিকাংশরই সাপে কাটার সাত দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়। রাজশাহী অঞ্চলে সাপে কাটা রোগিদের চিকিৎসা গ্রহণের আগেই মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর সাপের দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে আরো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলে এ বছরের আট মাসে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৩ জন। ২০২১ সালে সাপের কামড়ে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (এনসিডিসি) সর্বশেষ জরিপ (১৮ জুন, ২০২৩) অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে দেশে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায়। এদের মধ্যে ৭ হাজার ৫১১ জন মারা যান।

কিন্তু ২০২০ সালে সাপের কামড়ের শিকার হয়েছিলেন ছয় লাখ মানুষ। ওই বছর মারা যান ছয় হাজার জন। ২০১৭ সালে মার্কিন একটি জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় নয় লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়, যাদের মধ্যে ছয় হাজার জন মারা যান।

অর্থাৎ, এনসিডিসি’র সর্বশেষ তথ্য বলে, আগের তুলনায় এখন কম সংখ্যক মানুষকে সাপে কামড়াচ্ছে, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে।
সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা বলছেন সাপ বিশেষজ্ঞরা।

নগরায়ন বাড়ার কারণে সাপ বাসস্থান ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে সাপ মানুষের আবাসস্থলের কাছাকাছি চলে আসছে। এছাড়া বরেন্দ্র ও চরাঞ্চলে একই জমির ওপর বারবার অতিরিক্ত হারে ফসল ফলানো, সাপের কামড়ের পর হাসপাতালে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে সাপুড়ের কাছে ধর্না দেয়া ইত্যাদি মৃত্যুহার বাড়ার পেছনে অবদান রাখছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে জনসচেতনতার সাথে সাথে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।