সোমালিয়ায় জলদস্যুদের কবলে রাজশাহী অঞ্চলের তিনজন II নাবিক ও ক্রুদের অপেক্ষায় স্বজনরা

আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪, ৮:২৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিতে থাকা জলদস্যুদের কবলে পড়া ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের তিন রয়েছেন। তিনজন নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে রয়েছেন- নাটোর, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জের একজন করে। জলদস্যুদের কবলে পড়া নাবিক ও ক্রুদের অপেক্ষায় বাড়িতে রয়েছে স্বজনরা।

তারা হলেন, নওগাঁ শহরের আরজী নওগাঁ- শাহী মসজিদ ফিসারি গেট এলাকার আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে এএসএম সাইদুজ্জামান সাঈদ, নাজমুল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম চরনূরনগরের আবু শ্যামার ছেলে এবং জয় মাহমুদ নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে।

নওগাঁর সাইদুজ্জামান সাঈদের বাবা-মা বলেন, গতকাল (মঙ্গবার-১২ মার্চ) বিকেল ৩টার সময় জানতে পারি ছেলে যে জাহাজে রয়েছে সেই জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। তবে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। রাত ১০টায় আমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ছেলের। তখন ঘরে বন্দি করে রাখার কথা জানান। জাহাজটি তাদের জিম্মায় নিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর থেকে সারা রাত পরিবারের কেউ ঘুমাতে পারেনি। সারারাত আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছি ছেলের জন্য। ঘুমবিহীন রজনী কাটিয়েছি।

জাহাজটিতে আটক সাইদুজ্জামান সাঈদের স্ত্রী মান্না তাহরিন বলেন- সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি তাকে জানান তারা সবাই ভালো আছেন। ইফতার করছেন এবং সবাইকে এক রুমে রাখা হয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে জাহাজের আরেকজন আমাকে ভয়েস মেসেজ দিয়ে রেখে দেন সবাই ভালো আছেন। সেহরি খেয়ে সবাই মিলে এক সাথে রুমেই ঘুমাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এক বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বাচ্চাটা অনেক ছোট এখনো বুঝতে শিখেনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে একটাই আবেদন আমার স্বামীসহ জাহাজের সবাইকে সুস্থভাবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

নাটোর- জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান জানান, চার মাস আগে বাড়িতে এসেছিলো ছেলে। কাল রাতে তারাবির নামাজের পর এই ঘটনা জানতে পারি। আমার কিছু বলার ভাষা নেয়। যত দ্রুত সম্ভব সরকার সবাইকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক।

জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসন বলেন, বাড়িতে অন্য কারো স্মার্ট ফোন না থাকায় আমার ফোন দিয়েই সব সময় ভাই কথাবার্তা বলতো। ভাই কালকে হঠাৎ করে বলে তার সাথে নাকি আর কথা হবে না। কেনো হবে না জিজ্ঞেস করলে বলে যে, আমাদের জাহাজ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে তারা আমাদের জিম্মি করে রাখবে, তাই। এ কথা কাউকে বলার দরকার নেই। তার পর চারটার দিকে আবার ফোন দিয়ে ভাই বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলবে। ঐটাই শেষ কথা।

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মজিবর রহমান বলেন, রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জয় মাহমুদ সহ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ স্ক্রু জলদস্যুদের পড়ার খবর জানতে পেরেছেন। এরপর থেকে জয় দের পরিবার সহ প্রতিবেশীদের মাঝে অন্যরকম ভয় কাজ করছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই আটকা পড়াদের যেন সুস্থভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।

সিরাজগঞ্জ- নাজমুলের মা নার্গিস খাতুন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ইফিতারের সময় শিপিং কোম্পানি থেকে ফোন দেয়, ফোনটি আমিই ধরি। তারা বলে, আন্টি নালমুল সহ অনেককেই জলদস্যুরা ধরছে, তারা ডাকাতদের কবলে পড়ছে। কিন্তু আপনারা চিন্তা কইরেন না। আপনারা যোগাযোগ করতে পারবেন না কিন্তু আমরা যোগাযোগ করছি ও উদ্ধারের ব্যবস্থা করছি।

তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পর নাজমুল কল দিয়ে বলে, মা, আমাদের ২৩ জনকে আটকিয়ে রেখেছে। আমাদের জন্য দোয়া করো। রাতে তাদের বিরিয়ানি খেতে দিয়েছে। এরপর দোয়া চেয়ে আমার ফোন কেটে দেয়। তারপর থেকে আর যোগাযোগ নাই।

নাজমুলের মতো একই কোম্পানিতে একই পদে চাকরি পেয়েছে তার ফুফাতো ভাই আল মাহমুদ। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওর (নাজমুল) সঙ্গে আমার সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে। ও তখন পর্যন্ত বলেছে যে ভালো আছে ও খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো দিয়েছে। আমরা চাই সবাই ভালভাবে ফিরে আসুক।

স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, নাজমুলের এই খবর শুনে তার পরিবার খুব ভেঙ্গে পড়েছে। এলাকাবাসীও খুব কষ্ট পেয়েছেন। আমিসহ এলাকাবাসী চাই সুস্থতার সাথে দ্রুত যার সন্তান তার বুকে ফিরে আসুক।

কামারখন্দের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সুমা খাতুন বলেন, আমি মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর আমার ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, অবশ্যই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের উদ্ধার করা যায়।

কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সবুজ বলেন, জানার পরে নাজমুলের পরিবারের কাছে গিয়েছিলাম। তাদেরকে শান্তনা জানাতে ও এটা বলতে যে, আপনারা বিশ্বাস রাখুন সরকার দ্রুত আপনাদের ছেলেক ফিরিয়ে আনবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ