৪৯ শতাংশ পানিতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান

আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ পানির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা হবে কবে?

বিজ্ঞানীদের একটি দল গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, ৪৯ শতাংশ পানিতেই অনিরাপদ মাত্রায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে। এ পানির ওপর বাংলাদেশের জনসংখ্যার সিংহভাগই নির্ভরশীল। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এ তথ্য উদ্বেগের ও আতঙ্কের। গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ উচ্চমাত্রার আর্সেনিকের বিষয়টি। গবেষকরা দেখতে পান, বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম/লিটার ছাড়িয়ে গেছে।
কিছু নমুনায় দেখা গেছে, পানিতে আর্সেনিকের ঘনত্ব প্রতি লিটারে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ।

ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের সমস্যা আড়াই দশকের মত। প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আর্সেনিক সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আর্সেনিকের প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিকোসিস রোগের প্রাদুর্ভাবও লক্ষ করা যায়। এর ফলে সামাজিক সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠে। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে আর্সেনিকের বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং অন্য পদক্ষেপগুলোর অগ্রাধিকার কমে আসে। নিরবেই যে নিরাপদ পানির ওপর আর্সেনিক থাবা বিস্তার করেছে উল্লিখিত গবেষণা রিপোর্টে তা আবারো ভয়ঙ্কররূপে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসাটা খুবই স্বাভাবিক যে, আড়াই দশক আগের সমস্যাটি কোনো সমাধান হলো না কেন? কেনই বা নিরাপদ পানি নিয়ে একটি নিরাপদ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠলো না?

পানিবাহিত রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে বিশ শতকের সত্তরের দশকের গোড়া থেকে ইউনিসেফ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে টিউবওয়েল স্থাপনা শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। গভীর নলকূপের সংখ্যা অতি উদ্বেগজনকভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলিত হচ্ছে। মাটি ফিল্টার করে অণুজীব অপসারণ করে বিধায় এ টিউবওয়েল প্রকল্প এ দেশে কলেরার প্রকোপ প্রশমিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ভূগর্ভে আর্সেনিক খনিজ থাকায় টিউবওয়েলের এ সুফল ছিল ক্ষণস্থায়ী। ফলে কলেরা থেকে আর্সেনিক-দূষণের শিকার হয় দেশের মানুষ। তদুপরি ভূপৃষ্ঠের পানি থেকে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সরবরাহকৃত পানির সিংহভাগ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ আসে ভূগর্ভস্থ পানি পরিবাহী শিলা স্তর বা অ্যাকুইফার থেকে। উন্নত বিশ্বের পানি ব্যবস্থাপনায় উৎসের বিন্যাস বাংলাদেশের থেকে প্রায় পুরোপুরি উল্টো।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর ইউরোপে কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ পানি সংগৃহীত হয় ভূপৃষ্ঠের উৎস থেকে; বাকিটুকু ভূগর্ভের। ইউরোপের কিছু দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উত্তোলিত পানি পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পানির উৎসের ওপর চাপ কমাচ্ছে। যে বাংলাদেশে সাতশোর বেশি ছোট-বড় নদী, রয়েছে হাজারো খাল-বিল-পুকুরÑ সেখানে ভূপৃষ্ঠের পানি কৃষিক্ষেত্রে কেন ব্যবহৃত হচ্ছে না? কেবল পানির প্রাপ্যতাই এখানে মূল উপজীব্য নয়। ভূগর্ভস্থ পানি কৃষিক্ষেত্রে জোগান দেয়া হলে এতে দ্রবীভূত খনিজ, যেমন- আর্সেনিক কিংবা সিসা খাদ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে। চালে আর্সেনিকের ভীতির কথা নিশ্চয় ভুলে যাইনি আমরা। উত্তোলিত পানির প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে তখন পরিস্থিতি আশংকাজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনই সময় পানির নিরাপদ ও সুস্থিত ব্যবহার- ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক।