৪ কোটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ইউরোপের মানুষের সমান!

আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

তবে কি দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে?

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের দেশেও কিন্তু একটা অ্যাভেইল পিপল উচ্চবিত্ত হয়েছে। যেটা বলা হয়, আমাদের সতের কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় চার কোটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ইউরোপের মানুষের সমান।’
মঙ্গলবার রাজধানীতে পাঁচ দিনের জাতীয় ফার্নিচার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রীর যুক্তি, দেশেই যেহেতু ‘ইউরোপের মানুষের মত’ বিপুল সংখ্যক নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেহেতু তাদের জন্য ইউরোপীয় মানের আসবাবপত্র বানাতে পারেন ব্যবসায়ীরা।
মাননীয় মন্ত্রীর দেয়া তথ্যমতেই এটা বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, দেশে আয় বৈষম্যের মাত্রাও তদ্রƒপ। তুলনামূলক তথ্য দিলে এটা বুঝা খুব সহজ হতো যে, দেশের কত সংখ্যক মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। তিনি যে নিরীখে কথা বলেছেন তাতে এ দেশের খণ্ডিত মানুষের চিত্রই ফুটে উঠেছে।

দেশে আয় বৈষম্য যে বেড়েছে তা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যই সে কথা বলে দেয়। এই বৈষম্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ বিবিএস কর্তৃক প্রচারিত হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (ঐওঊঝ)-২০২২ মোতাবেক আয়বৈষম্য পরিমাপক গিনি সহগ বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ৪৯৯-এ পৌঁছে গেছে এবং দেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর কাছে জমা বেড়ে হয়েছে মোট আয়ের ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এমনকি দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় এখন দেশের মোট আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ আয় যাচ্ছে দেশের ধনী ৩০ শতাংশ মানুষের হাতে এবং বাকি ৭০ শতাংশ মানুষের আয় মোট আয়ের অবশিষ্ট ১ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এখন উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সে দেশের মোট আয়। কেননা, আয়ের ওপরেই নির্ভর করে দেশটির ব্যয়, উৎপাদন এবং সঞ্চয়। একটি দেশের মোট আয় বৃদ্ধি পাওয়া মানে হচ্ছে সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বোঝায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে আয় যে বাড়ে সেটা গরিব, ধনী উভয়েরই বাড়ছে কি না। অথবা ধনী-গরিবের আয় বাড়ার অনুপাতটা সমান কি না? মূলত এই যে একক আয় সমানভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া বা আয় বৃদ্ধির অনুপাতের তারতম্য হওয়াকেই সাধারণত আয়বৈষম্য বলা হয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য থাকবেই। তবে তা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব রাষ্ট্রীয় পলিসির মাধ্যমে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একটি বৈষম্যহীন সুষম অর্থনৈতিক সমাজকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, একটি বৈষম্যহীন সুষম অর্থনৈতিক সমাজকাঠামো প্রতিষ্ঠা ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আয়বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথ তৈরি করে। এ জন্য প্রত্যেক জাতির জন্য অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সব ধরনের অসমতা হ্রাস করা অত্যন্ত জরুরি।