ঈশ্বরদীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রির রেকর্ড

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ৮:৫২ অপরাহ্ণ


ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:


পাবনার ঈশ্বরদীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) প্রবাহিত এই তাপমাত্রাই এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস এই তাপমাত্রাকে ‘তীব্র তাপপ্রবাহ’ উল্লেখ করে জানিয়েছে এটিই ঈশ্বরদীতে এবছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ঈশ্বরদীতে এদিকে বুধবার সকাল থেকে বাতাসে আগুনের হল্কার মত গরম দমকা বাতাস ও তীব্র তাপ্রপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। ইদের ছুটির পর কর্মস্থল ফেরা মানুষ গরমের তীব্রতায় বাইরে যেতে পারছেন না। দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের কষ্ট আরো বেড়েছে। রোদের তীব্রতায় খালি চোখে রোদে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে। চোখ জ্বালা করা ছাড়াও গরমে ঘামে মানুষ আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী তাপমাত্রা পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, ঈশ্বরদীতে ‘তীব্র তাপপ্রবাহ’ বয়ে যাচ্ছে।

এদিকে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে ও পৌর এলাকার কোনো নলকূপে পানি উঠছে না। উপজেলা ও পৌর শহরের বেশিরভাগ এলাকার নলকূপে হাজার চাপেও উঠছে না পানি। পানির স্তর ৩৫ ফুটের নিচে নেমে গেছে, ফলে পৌরসভার সাপ্ল¬াই পানির সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন নেই। পানির লাইনে ঠিকমত পানি আসে না। এলেও পানির প্রবাহ দুর্বল হওয়ায় বাসাবাড়ির দোতলার ট্যাংকি পর্যন্ত পাইপ লাইনের পানি উঠছে না। আবার যেসব এলাকায় নলকূপ আছে সেসব নলকূপেও উঠছে না পানি। উপজেলা জুড়ে পানির জন্য নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি নিয়ে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৈশাখের শুরুতেই ওষ্ঠাগত গরমের মধ্যে গোসল, খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহারের পানি প্রাপ্তিতে নাকাল অবস্থায় পড়েছেন পৌরবাসী।

ঈশ্বরদীতে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাড়ির শিশু ও পুরুষ সদস্যরা আশেপাশের পুকুর কিংবা অন্য কোনো পানির উৎস থেকে গোসল সেরে বাড়ির নারী সদস্যদের জন্য বালতি, কলস ভরে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। খাবার ও রান্নার কাজে প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে ছুটতে হচ্ছে আশেপাশে যেসব প্রতিষ্ঠানে গভীর নলকূপ কিংবা সাবমার্সিবল পাম্প আছে সেখানে। শহরের উমিরপুর, ফতেমোহাম্মদপুর, মাজড়িয়া, স্কুলপাড়া, সাঁড়াগোপালপুর, বিলপাড়া, পাতিবিল, শৈলপাড়া, লোকোকলোনি, নূর মহল¬াসহ বিভিন্ন এলাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, গত এক মাস ধরে রূপপুর এলাকার সব টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না।

ঈশ্বরদীতে শহরের ফতেমোহাম্মদপুর, নিউ কলোনী, তিনতলা এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষ স্থানীয় একটি মসজিদের সাব মার্সিবল পাম্প থেকে প্রতিদিন দুইবার করে লাইন ধরে পানি সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, সকাল ও দুপুরে একবার করে মসজিদ থেকে লাইন ধরে পানি সংগ্রহ করে পানির প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয় গৃহবধু সালেহা বেগম বলেন, গত ১০-১৫ দিন ধরে বাড়ির নলকুপে পানি উঠছেনা। বাধ্য হয়ে দুপুরের কাঠফাটা গরমের মধ্যে কলস, বালতি নিয়ে মসজিদের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
পাাকশীর রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, গত ১ মাস ধরে রূপপুরসহ আশেপাশের কোন টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।

ঈশ্বরদী পৌরসভায় খোঁজ, পৌর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ১১টি পানির পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি পাম্পের মাধ্যমে পৌরবাসীকে পাইপলাইনে পানি সরবারাহ করা হয়। ৪টি পাম্প ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে পানির চাপ কম থাকার কারনে পাইপ লাইনেও পানির সরবরাহ স্বাভাবিক নেই।

পৌরসভার পানি শাখার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর বিশ্বাস বলেন, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈশ্বরদীতে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২৫ ফুটের নিচে নামতেই কোন কোন এলাকার টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর ৩৫ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ার কারনে নলকুপে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।

ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জানান, ঈশ্বরদীবাসীর পানির কষ্ট লাঘবের জন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহের উন্নত ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পৌর এলাকার বাসিন্দাদ’র পৌরসভার পানির লাইন থেকে সংযোগ নেয়ার আহবান জানায় পৌর মেয়র।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ