কবরস্থান থেকে উদ্ধার হওয়ার বৃদ্ধাতে হত্যা করেন পুত্রবধু

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলায় কবরস্থান থেকে বেদেনা বেওয়া (৭২) নামের এক বৃদ্ধার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে বিরোধ ছিল পুত্রবধূর। সেই বিরোধের জেরে শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পনা করেন পুত্রবধূ। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে খাওয়ানো হয় ঘুমের বড়ি। এরপর তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় কবরস্থানে। লাশ ফেলে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে দুই কিশোর-কিশোরী।

গেল ১২ এপ্রিল বেদেনা বেওয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেদেনা বেওয়াকে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেফতার তার পুত্রবধূ কনিকা খাতুন ১৪ এপ্রিল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওসি সাইদুর রহমান বলেন, বেদেনা বেওয়ার পুত্রবধূ কনিকা খাতুন তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অভিযোগে পুলিশ বেদেনা বেওয়ার এক নাতি ও এক নাতনিকে গ্রেফতার করেছে।

খুন হওয়া বেদেনা বেওয়া (৭২) পুঠিয়া উপজেলার থান্দারপাড়ার মোজাহার আলীর স্ত্রী। মোজাহার প্রায় ৩৩ বছর আগে মারা গেছেন। বেদেনার এক ছেলে ও মেয়ে। কনিকা খাতুন তার ছেলে রিপন আলীর স্ত্রী। এই ঘটনায় রিপন আলীর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে (১৪) এবং চাচাতো ভাই জুয়েলের ছেলেকে (১৬) গ্রেফার করা হয়েছে।

পুঠিয়া থানার ওসি বলেন, কনিকার বাবার বাড়ি জেলার চারঘাট উপজেলায়। আট বছর আগে রিপনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বেদেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার সময় রিপন আলী বাইরে ছিলেন। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। বেদেনা বেওয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর প্রথমে কনিকা খাতুন ও রিপন আলীর প্রথম স্ত্রীর মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরই তারা পুলিশের কাছে বেদেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে ১৪ এপ্রিল কনিকা খাতুন ও বেদেনার নাতনি রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

পুঠিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান আদালতে দেওয়া কনিকা খাতুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলেন, শাশুড়ির সঙ্গে কনিকার মনোমালিন্য ছিল। এ নিয়ে ঘটনার দিন (৯ এপ্রিল) তার সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছিল। এর জেরে তিনি তাঁর শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ইফতারের সময় পরিকল্পনামাফিক তিনি শরবতের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে রিপন আলীর প্রথম স্ত্রীর মেয়েকে বলেন, ‘এই শরবত তোমার দাদিকে দাও।’ কিন্তু প্রথমে ওই মেয়ে তার দাদিকে শরবত দিতে রাজি হয়নি। বলেছে, ‘তুমিই দাও।’ তখন কনিকা বলেছেন, তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, তিনি দিলে খাবেন না। তখন ওই মেয়ে তার দাদির হাতে শরবতের গ্লাস তুলে দেয়। দাদি শরবত পানের পরপরই ঘুমিয়ে পড়েন।

এরপর কনিকা বালিশচাপা দিয়ে বেদেনা বেওয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে তিনি তাঁর চাচাতো দেবর জুয়েলের ছেলেকে ডাকেন। তিনি তাকে ১মে কেক খেতে দেন। তারপর তিনি তার সহযোগিতা চান। কনিকা, রিপন আলীর ১ম স্ত্রীর মেয়ে ও কনিকার চাচাতো দেবরের ছেলে মিলে বেদেনা বেওয়ার লাশটি বস্তায় ভরে দেয়ালের ওপর দিয়ে পাশের কবরস্থানে ফেলে দেয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ