চাঁদা দিতে না পারায় গোরস্থান কমিটি দাফন করতে দেয়নি প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, ৮:২০ অপরাহ্ণ

নাটোর প্রতিনিধি:নাটোরের বড়াইগ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে জেসমিন নামের এক গৃহবধূর অপমৃত্যুর ঘটনায় গোরস্থান কমিটির চাহিদামত চাঁদা দিতে না পারায় কবর খনন করেও ওই গৃহবধুর মরদেহ দাফন করতে দেয়া হয়নি কবরস্থানে। পরে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ির ভিটার এক পাশে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তার মরদেহ দাফনের জন্য সভাপতির অনুমতি নিয়ে স্বজনরা লক্ষ্মীপুর সামাজিক গোরস্থানে কবর কাটেন। জুম্মার নামাজের পর জানাজার সময়ও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গোরস্থান কমিটির হস্তক্ষেপ দাফন করা সম্ভব হয় নি। ওই গৃহবধূর নাম জেসমিন বেগম (৩২) সে বড়াইগ্রাম উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকমান হোসেন ফকিরের বড় মেয়ে এবং গোয়ালফা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী সমজান আলীর স্ত্রী।

পুলিশ ও গ্রামবাসি সূত্রে জানা যায়, বাবা স্বামীর সাথে ছোট বোন ময়না খাতুনকে মালয়েশিয়া প্রবাসী পাত্রের সাথে বিয়ে দেয়া নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেসমিন বাবার বাড়িতে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে সামাজিক গোরস্থানে তার জন্য কবর খোঁড়া হয়। জেসমিনের বাবার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন গোরস্থান কমিটির সদস্য আ. রশীদসহ অন্যরা। টাকা দিতে না পারায় সামাজিক গোরস্থানে খনন করা কবরে দাফন করতে বাধা দেন কমিটি। এ নিয়ে সারাদিন দেন দরবার করেও কাজ না হওয়ায় সন্ধ্যায় বাধ্য হয়ে বাড়ির ভিটার এক-পাশে পুনরায় কবর কেটে ওই গৃহবধূর মরদেহ দাফন করা হয়।

স্থানীয় মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূর বাবা কবরস্থানের সদস্য না হলেও তার চাচা আব্দুর রাজ্জাক সদস্য। দাবীকৃত চাঁদা দেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে ছিল কিন্তু সেই সময় দেয়া হয়নি।
ওই গৃহবধুর চাচা আব্দুর রাজ্জাক জানান, সভাপতি গোরস্থান কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দিন (হাজ¦ী) কাছে অনুমতি নিয়েই কবর খনন করা হয় কিন্তু অন্যরা বাদী হলে তাদের কাছে মরদেহ দাফনের অনুমতি দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথা শুনেনি।

কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক বলেন, কবরস্থানটি সামাজিক ১৩৫ ঘর তাদের টাকায় কেনা। এখানে কিছু কারণ ও নিয়ম রয়েছে। নিহতের বাবা আমাদের গোরস্থানের সদস্য না। তারপর তিনি আগে যেই গোরস্থানের সদস্য ছিলেন তারাও বিষ খেয়ে মারা যাওয়ার কারণে সেখানে দাফন করতে দেয়নি। এখানে আত্মহত্য করলে কমিটির সদস্য ছাড়া কাউকে মাটি দেয়া হয় না।
আমাদের পক্ষ থেকে সমাধান দেই যে, নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে গোরস্থানের সদস্য হতে। পরে তিনি গোরস্থানের সদস্য না হয়ে পরবর্তীতে তাদের বাড়ির পাশে তার মেয়েকে দাফন করেন।

এব্যাপারে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ শফিউল আজম খাাঁন জানান, ওই গৃহবধূর ব্যাপারে অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছে কিন্তু মরদেহ দাফনে বাঁধা দেয়ার ঘটনা তার জানা নেই । কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।