জয়পুরহাটে কৃষি কাজে ব্যবহৃত জাঁতের ব্যবহার এখন বিলুপ্তির পথে

আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৩, ১০:৩৭ অপরাহ্ণ


জয়পুরহাট প্রতিনিধি:


কৃষি নির্ভর এলাকা হিসেবে খ্যাত জয়পুরহাট জেলার মানুষ এক সময় কৃষিতে সেচ কাজে ব্যাপক হারে ‘জাঁত’ ব্যবহার করলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সেইটা বিলুপ্তির পথে।
জেলার সর্বত্র আগে চোখে পড়তো কৃষি কাজে বিশেষ করে জমিতে পানি সেচ দেওয়ার সময় কাঠের তৈরি এক ধরনের আদি যন্ত্র ‘জাঁত’ ব্যবহার করতো কৃষকরা। নতুন প্রজন্মের কাছে জাঁত শব্দটি এখন গল্প হয়ে রয়েছে। আদি কাল থেকে পানি সেচ দেওয়ার এই যন্ত্রটি অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম থাকলেও জয়পুরহাট অঞ্চলের মানুষ জাঁত হিসেবেই চেনেন। এক সময় জমিতে সেচ দিতে জেলার প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ছিল এই জাঁত। বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষকরা কৃষিযন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে তাই জাঁত গেছে জাদুঘরে।

জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রবীণ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য পানি সেচ দেওয়ার মাধ্যম ছিল বাঁশ ও টিনের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন। খাল, বিল, নদী নালা থেকে সেঁউতি দিয়ে সাধারণত পানি তোলা হলেও উঁচু জমিতে পানি সেচ দিতে ব্যবহার করা হতো জাঁত। গ্রাম-বাংলার কৃষকদের আদি চিন্তা চেতনার ফল ছিল এই কাঠের তৈরি জাঁত আবিষ্কার। আম অথবা কাঁঠাল গাছের মাঝের অংশ কেটে তার মাঝখানে ড্রেন তৈরির মাধ্যমে বানাতো এই জাঁত। কোন-কোন স্থানে নারিকেল, তাল ও পাইন গাছ দিয়েও জাঁত তৈরি করা হতো। আবার কাঠের তকতা দিয়েও জাঁত তৈরি করা যায়। জাঁত দিয়ে পানি সেচ দিতে তেমন খরচ হতো না বলে এক সময় এই অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে ঘরে ছিলো জাঁত।

আক্কেলপুর উপজেলার মহিতুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে কৃষি যন্ত্রপাতি শ্যালো, ডিপ টিউবওয়েল ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্রের কারনে আদি যন্ত্র জাঁতের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, খাল-বিলে বা ডোবায় আগে পানি থাকতো জাঁত দিয়ে পানি সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করা হতো। কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর জাঁত চোখে পড়ে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বাংলার কৃষি ক্ষেত্রে ঐতিহ্য জাঁত এখনও অনেক কৃষক শখের বসে ধরে রেখেছেন। যা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। কৃষিকে কৃষকরা কী পরিমাণ ভালোবাসতো জাঁত তার বহি:প্রকাশ। বর্তমানে কৃষকরা কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ও কৃষি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় অধিক ফসল ঘরে তুলছেন।