ভাবে-অনুভবে স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪৩১

আপডেট: এপ্রিল ১৩, ২০২৪, ৮:২১ অপরাহ্ণ

 

ভাবে-অনুভবে স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রোববার পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের উৎসব-আয়োজনে মেতে ওঠার দিন। মানুষে মানুষে মহামিলনের দিন। রঙে রঙে রাঙ্গার দিন, রাঙ্গানোর দিন।

পহেলা বৈশাখ– বর্ষবরণ ভাবে অনুভবে অমলিন। মানুষে মানুষে মহামিলনের সেতু অবিচ্ছিন্ন অটুট- যেথা শুধুই আনন্দ-উৎসবের দোলা আর মান্যতার গান গুঞ্জরিত হয়। ঘরের মধ্যে একান্ত পারিবারিক আয়োজনেও বর্ষবরণের মেজাজ রাঙায়িত হয়ে থাকে।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সন ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনের মধ্য থেকে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন সন্দেহ নেই বাংলাদেশের সার্বজনিন একটি এবং একমাত্র উৎসব। ধর্ম-বর্ণ, ধনি-গরিব নির্বিশেষে এটি সবার উৎসব। বাংলা নববর্ষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বারবার জাগ্রত হয়, শাণিত হয়-শপথে, অঙ্গীকারে।

বাঙালি পুরনো বছরের সকল অপ্রাপ্তি ভুলে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জঙ্গিবাদ ও রাজাকারমুক্ত একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মহাদুর্যোগকালে বাঙালি জাতি চেতনায়-অনুভবে এবারও বরণ করে নিবে পহেলা বৈশাখ।

বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ রীতি এখনও এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। যদিও এই ধারা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষক সমাজ আজও অনুসরণ করছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এককালে কেবল গ্রামাঞ্চলেই পয়লা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠতো মানুষ। নানা অনুষ্ঠান, মেলা আর হালখাতা খোলার মাধ্যমে তখন করানো হতো মিষ্টিমুখ। এখন আধুনিক বাঙালি তাদের বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলে মাতৃভূমির প্রতিটি আঙিনায় আরও বেশি উজ্জ্বলতায়, প্রাণের উচ্ছ্বলতায়, আরো বর্ণিল করে।
বাংলা ১৪৩০ সনকে বিদায় এবং চেতনায়-অনুভবে স্বাগত নববর্ষ ১৪৩১।