৭২ বছরেও কলঙ্কমুক্ত হতে পারেনি ঈশ্বরদীবাসী ভাষা সংগ্রামীর নামে প্রতিষ্ঠিত মঞ্চ ভেঙে শৌচাগার নির্মান ভাষার মাসে ঈশ^রদীবাসীর মন খারাপ দুটি কারণে

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ণ


ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:এ বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারীতে পাবনার ঈশ্বরদীতে দুটি কারনে ঈশ্বরদীবাসীর মন খারাপ। একটি হলো একজন ভাষা সংগ্রামীর নামে শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরদীর একমাত্র উন্মুক্ত মঞ্চ ‘মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চ’ ভেঙে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রেলওয়ের আধুনিক শৌচাগার। মন খারাপের অন্য কারণ হলো ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার বিরোধীতাকারী সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের কলঙ্কের নাম এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ঈশ^রদীবাসীকে।

ঈশ্বরদীবাসী গত বছর ভাষার মাসেই ৮ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদীর ‘মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চ’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বছর জুড়ে অনেক আন্দোলন করেও মঞ্চটি পূন:স্থাপন করার ব্যবস্থা হয়নি এখনো। এবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারীর শুরুতেই ভাষা সংগ্রামীর নামের সেই মঞ্চটি নতুন করে স্থাপনের দাবি উঠেছে।

অন্যদিকে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচারণ করা সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরদীর ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়’টির নাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭২ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো কলঙ্কজনক সেই খাজা নাজিম উদ্দীন এর নাম ঈশ^রদী থেকে এখনো মুছে ফেলা যায়নি।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী পল্টন ময়দানে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন “একমাত্র উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”-বলে ঘোষণা করেছিলেন। অথচ ঈশ্বরদীর নাজিম উদ্দীন স্কুলের নামকরনের মধ্য দিয়ে সেই নাজিম উদ্দীনের নাম গত ৭২ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঈশ্বরদীবাসী।

৪ বছর আগে ঈশ্বরদীবাসী এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার দাবি আরো জোরদার হলে সেসময় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নরুজ্জামান বিশ্বাস এই তদন্ত কমিটির সদস্য। সর্বশেষ গতকাল বুধবার বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় অফিস এবং ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি এখনো। ৪ বছর আগে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম দু-একটি মিটিং আর সুপারিশনামা পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আন্দোলন, তদন্ত কমিটি গঠন ও স্কুল থেকে সুপারিশনামা রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও এখনো বিষয়টি ‘পাঠানো’ পর্যন্তই রয়েছে।

‘ঈশ্বরদীর ইতিহাস’ বইয়ের প্রণেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ জানান, ১৯৫২ সালে ঈশ্বরদীর আটকেপড়া পাকিস্তানী অবাঙালিরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঈশ্বরদীর লোকো রোডে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিরাটাকার রেলওয়ে রানিংরুমে তৎকালীন পাকিস্তানী উর্দূভাষী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে নামকরণ করে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠা পায় স্কুলটি। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খোঁজ নিতে ঈশ্বরদীর নাজিম উদ্দীন স্কুলে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার আব্দুর রহমান জানান, ৪ বছর আগে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট এই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ্ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান রেখে সরকারী রেলওয়ের এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আমরা স্কুল ও উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশমালাসহ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।

ভাষা সংগ্রামীর নামে প্রতিষ্ঠিত ঈশ^রদীর একমাত্র উন্মুক্ত মঞ্চ ‘মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চ’ ভেঙে সেখানে শৌচাগার নির্মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেলের জায়গায় নির্মিত মঞ্চটি রেলওয়ের প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ