অফিসে তালা, বাইরে বসে কাজ করছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা!

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


বদলি হয়ে এসে অফিসে ঢুকতে পারছেন না রাজশাহীর পবা উপজেলার নতুন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন। বুধবার (১৭ এপ্রিল) তিনি অফিসে গিয়ে দেখেন তাঁর কক্ষটি তালাবদ্ধ। তারপর দায়িত্ব গ্রহণ করে অফিসের সামনে বেঞ্চে বসেই দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরু করেন তিনি। ফাতেমা খাতুন জানিয়েছেন, যে কর্মকর্তার স্থলে তাঁকে পদায়ন করা হয়েছে ওই কর্মকর্তা তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। তিনি অফিসে তালা দিয়ে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় ছয় বছর ধরে পবায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন শিমুল বিল্লাহ সুলতানা। গত ২৮ মার্চ শিমুল বিল্লাহকে নাটোরের বড়াইগ্রামে বদলি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে বড়াইগ্রামের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুনকে পবায় বদলি করা হয়। পরে ৩ এপ্রিল আরেক প্রজ্ঞাপনে শিমুল বিল্লাহ সুলতানাকে বড়াইগ্রামে রেখেই হাবিবা খাতুনকে রাজশাহীর দুর্গাপুরে পদায়ন করা হয়। আর পবায় বদলি করা হয় দুর্গাপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুনকে। এখন এই তিন কর্মকর্তাই পবা উপজেলায় থাকতে চাচ্ছেন।

বুধবার দুপুরে পবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মচারীদের দপ্তর খোলা থাকলেও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কক্ষটি তালাবদ্ধ। বাইরে বসে দাপ্তরিক কাজকর্ম করছেন সবশেষ বদলি হয়ে আসা কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন। তিনি জানান, সবশেষ ৩ এপ্রিল তাঁকেই পবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এরপর ৮ এপ্রিল তিনি জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে যোগদান করেছেন। কিন্তু পবায় এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। বদলি হওয়া কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। তাই গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে তিনি নিজেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অফিস তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে বেঞ্চে বসে কাজকর্ম শুরু করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে হাবিবা সুলতানা বলেন, ‘পবায় বদলি হয়ে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে দুর্গাপুরে বদলি করা হয়েছে। দুর্গাপুরে আমার বাবার বাড়ি, শ^শুরবাড়িও সেখানে। তাই ওইখানে আমি কাজ করতে চাই না। এ জন্যই পবার দায়িত্ব ছাড়িনি। ফাতেমা খাতুনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিইনি। আমি পবাতেই থাকতে চাই। দুর্গাপুরে যাব না।’

পবায় থাকার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বদলি হওয়া কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহও। ২৮ মার্চ তাঁর বড়াইগ্রামে বদলির আদেশ হলেও তিনি বুধবার পর্যন্ত সেখানে যোগদান করেননি। শিমুল বিল্লাহ বলেন, ‘আমার বাড়ি রাজশাহী শহরে। বড়াইগ্রামে যাতায়াত আমার জন্য কষ্টকর। আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন। সেখানে বদলি করা হলেও হতো। আমি মন্ত্রণালয়ে যাব। কান্নাকাটি করে বোঝাব।’ তিনি বলেন, ‘সবশেষ পবায় ফাতেমাকে বদলি করা হয়েছে। আইনত তিনিই এখন পবা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। সুন্দরভাবে তিনি দায়িত্ব বুঝে নিতে পারতেন। তা না করে নিজে নিজেই দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি ঠিক করেননি।’

জানতে চাইলে ফাতেমা খাতুন বলেন, ২০২২ সালের ৪ জুলাই তাঁকে দুর্গাপুর থেকে পবায় বদলি করা হয়েছিল। তখন শিমুল বিল্লাহ সুলতানা তাঁকে পবায় যোগদান করতে দেননি। তিনি দেড়মাস ধরে ঘুরেও যোগদান করতে পারেননি। ওই সময় শিমুল বিল্লাহও দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে অফিসে তালা দিয়ে রাখতেন। রাজশাহী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক শবনম শিরিনও তাঁকে সহযোগিতা করেননি। পরে ২১ আগস্ট ওই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। শিমুল বিল্লাহ তদবির করে ওই আদেশ স্থগিত করিয়েছেন।

ফাতেমা বলেন, তাঁর স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ। বছরে কয়েকবার ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। তিনি অফিসে গেলে রাজশাহী শহরের বাসায় স্বামী একাই থাকেন। শহরের কাছাকাছি পবার যোগাযোগব্যবস্থা ভাল হওয়ায় তিনি এখানে থাকতে চান। তাহলে অল্প সময়ে বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়া-আসা করতে পারবেন। স্বামীর সেবা করতে পারবেন। এ জন্য তিনি পবায় থাকতে চান। তাই দেড় বছর আগের মতো দেড় মাস ধরে না ঘুরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এখনও হাবিবা পবা ছাড়তে চান না। শিমুল বিল্লাহও এখানে থাকতে চান।’

দেড় বছর আগে ফাতেমা যোগদান করতে না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন শিমুল বিল্লাহ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমার বাচ্চার এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। তাই পবা ছাড়তে পারিনি। মন্ত্রণালয়ে কেঁদেকেটে ওই আদেশ স্থগিত করেছিলাম। এখন বড়াইগ্রামে বদলি করেছে। সেখানে যাতায়াত করাটাও আমার জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমি আবার মন্ত্রণালয়ে যাব। পবায় রাখলেই ভাল। তা না হলে ঢাকার কাছাকাছি কোথাও যেতে চাই।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক শবনম শিরিনকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও ধরেননি। তালাবদ্ধ অফিসে ফাতেমা খাতুনের বাইরে কাজকর্ম করার ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, ‘বিষয়টা শুনেছি, সবশেষ তাঁকে পদায়ন করা হয়েছে বলে তিনিই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। কিন্তু আমি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নই বলে এই জটিলতার সমাধান আমি করতে পারি না। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমেই বিষয়টির সমাধান করে নিতে বলেছি। মন্ত্রণালয় যাকে দেবে, উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে আমি তাঁর সঙ্গেই কাজ করতে রাজি।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ