ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার II রামেক হাসপাতালে যেমন ছিলো দুর্ভোগের চিত্র

আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪, ৮:৩০ অপরাহ্ণ

 


নিজস্ব প্রতিবেদক:ভাতা বৃদ্ধি এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৪ দফা দাবিতে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতি টানা চারদিন ধরে চলার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ^াসে স্থগিত হলো। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টার দিকে ঘোষণার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

তবে চারদিন ধরে ইর্ন্টান চিকিৎসকরা ধর্মঘট পালন করায় বেশ বিপাকে পড়েছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের দুর্ভোগের চিত্রও ছিলো চরমে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে হাসপাতালের সেবা চিত্র পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

চারদিনে যেমন ছিলো দূর্ভোগের চিত্র:
হঠাৎ ধর্মঘটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কোন কোন ওয়ার্ডের সেবা স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলো। রোগীরাও পদে পদে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমবিবিএস শেষ করে প্রায় ২৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ আরও প্রায় ৬০ জন এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্সের চিকিৎসকরা গত রোববার থেকে কর্ম বিরতিতে ছিলেন। এতে প্রতিটি ওয়ার্ডের সিনিয়র ডাক্তার, নার্সদের উপর যেমন চাপ বেড়েছিলো, তেমনি চরম অবহেলা ও দুর্ভোগের কবলে পড়েছিলো রোগীরা।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুওে দেখা গেছে, কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ওয়ার্ডে নেই। মেডিকেল কলেজের প্রভাষক পর্যায়ের চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এসব চিকিৎসকরা সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ছিলেন। আবার রাতে ১০ টার দিকে একবার এসে আবারও চলে যেতেন। আর অতি জরুরি শিশু ওয়ার্ড, সার্জারী ও গাইনি ওয়ার্ডে একজন করে ডাক্তার রাত ১০ টা পর্যন্ত থাকতেন বলে জানা যায়। বাকি সময় মুঠোফোনে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতেন।

রোগীরা জানিয়েছেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডে ডাক্তার ছিলো। কিন্তু বিকেলের পর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ডাক্তার শূণ্য থেকেছে। বিকেলের পর হঠাৎ কওে কোন রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নার্স ও এ্যাসিসট্যান্ট রেজিষ্ট্রাররা সিনিয়র ডাক্তারদেও ফোন দিয়ে পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা নার্সরাই দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩২ নম্বর কার্ডিওলজি বিভাগের বারান্দায় কাতরাচ্ছিলেন এক রোগী। ওই রোগীর স্বজন সুমী রানী জানান, তারা বুধবার রাতে রোগী নিয়ে এসেছিলেন। সে সময় ডাক্তার ছিলো না। নার্সরাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। পরে ডাক্তার এসে ওষুধ লিখে দেন। এরমধ্যে কয়েকবার তিনি গিয়েছেন। ডাক্তার পান নি। নার্সরাই দেখে কাগজ নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ওষুধ দিয়ে গেছেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন আনারুল ইসলাম বলেন, সকালে ডাক্তার ছিলো। কিন্তু দুপুরের পর ডাক্তার থাকে নি। নার্সরাই ওষুধপত্র দিয়েছে। কারও সমস্যা বেশি হলে তখন ফোন দিয়েছে ডাক্তারকে।

মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন আশির হোসেন জানান, সিনিয়র ডাক্তার সকালে একবার আর রাতে একবার আসছে। বাকি সময় নার্সরাই দেখেছে। কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে, নার্সরা বলেছে, ডাক্তার নাই। তাদেরকেই বলতে হবে।

হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ওয়ার্ডে সবসময় একজন ডাক্তার ছিলো। কিন্তু একজন ডাক্তার এতোগুলো রোগীকে ম্যানেজ করা অসম্ভব। এতে রোগীদের প্রয়োজনে সাড়া দিতে একটু সময় লেগেছে। আর এই চারদিন এক শিফটের পরিবর্তে দুই শিফট কাজ করতে হয়েছে তাদের।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শিশু ওয়ার্ডে মাত্র দুইজন ডাক্তার ছিলেন। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে স্ক্যানুতে চিকিৎসা দেয়ানো হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ জানান, ইর্ন্টান চিকিৎসকসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন জনবল ছিলো না। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে। তবে জরুরি জায়গাগুলোতে জনবল ম্যানেজ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারও ছিলো।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ