সাবেক চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় গুমানী নদীতে মাটি কাটার মহোৎসব, নির্বিকার প্রশাসন

আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ণ


শাহীন রহমান, পাবনা:পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শুকিয়ে যাওয়া গুমানী নদীতে পড়েছে মাটি খেকো চক্রের কালো থাবা। এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় এই নদীতে মাটিকাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। ভেকু মেশিন দিয়ে দিনে-রাতে মাটি কেটে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনোরূপ পদক্ষেপ নেই। নদী থেকে মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে অবৈধভাবে স্থাপিত ইট ভাটাগুলোতে। অনবরত মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি দিনে ও রাতে মাটি বোঝাই ডাম্প ট্রাক ও শ্যালোইঞ্জিন চালিত ভুটভুটি গাড়ি চলাচল করায় এলাকার সড়কগুলো বিনষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নায়েব আলী ও চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন গুমানী নদীর নিমাইচড়া পশ্চিমপাড়া, ধানকুনিয়া মন্ডলবাড়ি ও মির্জাপুর এলাকায় দিনে-রাতে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকনের ছত্রছায়ায় তারা এই মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নায়েব আলী গুমানী নদীর মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষের স্বার্থে বিভিন্ন গর্ত ভরাট করে দিচ্ছি। কয়েকজন ভাগীদার মিলে গত ৪/৫ দিন ধরে এই মাটি কাটছেন। তাদের মাটি কাটা বাণিজ্যের সাথে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকনও রয়েছেন বলে জানান নায়েব মেম্বার।’

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিমাইচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘মাটি কাটার সাথে নাই বললে ভুল হবে। আছি সহযোগিতায়। গ্রামের কিছু ছোট ভাই কাটছে, কিছু করে খাচ্ছে, আমি তাদের সহযোগিতা করছি এই আর কি। তারা যদি আমার নাম বলে তাহলে কি করার আছে। আর যেখানে মাটি কাটছে সেটা গুমানী নদী নয়, ওটাকে বলে বাটা গাঙ।’

এদিকে, গুমানী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে ও পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ‘চলনবিল রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

ইতঃপূর্বে গত ২০ মার্চ সংগঠনটি একই দাবিতে পাবনা জেলা প্রশাসক, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। বরং মাটি কাটা আরো বেড়েছে।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব, বাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘গুমানী নদীতে মাটি কাটা বন্ধের আবেদন জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ফল পায়া যায়নি। বরং গুমানী নদীতে মাটি কাটার মহোৎসব শুরু হয়। আজকে (৪ এপ্রিল) ফের উপজেলা নির্বাহী-কর্মকর্তার নিকট আবেদন বিষয়ে কথা বলেছি। দেখা যাক কি হয়।’

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘নদীর মাটি কাটা অপরাধ। নদী থেকে মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version