নদীর গতিপথ বদলের অপচেষ্টা ও ফসল হানির অভিযোগ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ণ


জয়পুরহাট প্রতিনিধি:জয়পুরহাটে একটি প্রভাবশালী মহল ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে ফসল নষ্ট করে জমির মাটি কেটে হারাবতী নদীর গতিপথ বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ আছে যে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদুল হোসেন সরকারের নেতৃত্বে এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামবাসীর কাছ থেকে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী রহমতপুর গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন, সাদ্দাম হোসেন ও মুকুল হোসেন এবং হুমায়ুন আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, এ কাজ বাস্তবায়িত হলে হারাবতী নদীর তীরবর্তী এলাকার ৫০-৬০ শতক সরকারি জমির ফসল হানি ঘটবে। যে জমিগুলো তাঁরা বংশপরম্পরায় প্রায় ৭০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, সরকারি অনুমতি ও নির্দেশনা ছাড়া এই নদীর গতিপথ
পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ অব্যাহত রাখা হলে, ফসল হানিসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তাঁরা। তাই এর প্রতিকার চেয়েছেন তারা।

অপরদিকে, ওই প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদুল হোসেন সরকার জানান, তারা হারাবতী নদীর তীরবর্তী তিন দশমিক ১৮ শতক আয়তন বিশিষ্ট ১টি কবরস্থানের প্রায় ৫০-৬০ ফুট জায়গা সংরক্ষণের জন্য নদীটির গতিপথ পরিবর্তনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। অবশ্য এ কাজের জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন অনুমোদন নেননি। সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং পাঁচবিবি উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আপাতত খনন কাজ বন্ধ রেখে এখন তাঁরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির চেষ্টায় আছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রহমতপুর গ্রামের পূর্ব পাশে হারাবতী নদীর তীরে ওই গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ১৮ শতক, মুকুল হোসেন ৪ শতক, সাদ্দাম হোসেন ১৫ শতক এবং হুমায়ন ১৪ শতক জমি বংশ পরম্পরায় প্রায় সত্তর বছর যাবত ভোগ দখল করে আসছেন। ওই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে তারা প্রতি বছর প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। যা তাদের সংসার পরিচালনায় অনেক উপকারে আসে। বর্তমানে ওই জমিতে মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলুসহ কিছু শাকসবজি ও উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়ো গুলোতে অসংখ্য জালি এসেছে। সেই ফসল নষ্ট করে খনন কাজ শুরু করা হয়। এতে ইতোমধ্যে প্রায় ৮-১০ শতক জমির মিষ্টি কুমড়া নষ্ট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারি (ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট) আবু রায়হান বলেন, ‘পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের পূর্ব পাশে হারাবতী নদীর গতিপথ বন্ধ করে মাটি খনন করছেন এলাকাবাসী। এমন খবরের প্রেক্ষিতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমি সরেজমিন ঘটনাস্থলে যাই। আমার পরিচয় দিয়ে তাঁদের নদীর গতিপথ বন্ধ করতে নিষেধ করি। এই বলি যে, নদীর গতিপথ বন্ধ করা যাবে না। সেটা প্রাকৃতিকভাবে নিজ গতিতেই চলমান থাকবে। এটাই নীতিমালা বা নদী সংক্রান্ত আইন। তবে আইন লংঘন করে জোর পূর্বক এ কাজ চলমান রাখলে, সে দায় আপনাদের উপর বর্তাবে। এরপর আমার কাজের অংশ হিসেবে ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গেলে তাঁরা নানান কথা বলেন এবং আমার কাজে বাধা দেন। ফলে সেখান থেকে ফিরে এসে বিষয়গুলো আমি নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদকে জানিয়ে দেই।’

পাঁচবিবি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, উপজেলার রহমতপুর গ্রামের পূর্ব পাশের একটি কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হারাবতী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে মাটি খনন করছেন। এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে সাথে সাথে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই কাজের জন্য গ্রামবাসীদের উপজেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদনের পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠিত হবে। সেই কমিটির সদস্যরাই ঠিক করবেন কিভাবে নদীর গতিপথ ঠিক রেখে কবরস্থানের হেফাজত করা যায়।