নেসলে পণ্যে মাত্রাতিরিক্ত চিনি

আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

কর্তৃপক্ষের গুরুত্বারোপের দাবি রাখে
বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকারী সুইস কোম্পানি নেসলের বাংলাদেশে শিশুখাদ্য হিসেবে সর্বাধিক বিক্রিত দুটি পণ্য- সেরেলাক এবং নিডোতে উচ্চ-মাত্রার চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য উন্নত দেশে নেসলের বিক্রি করা একই শিশুখাদ্যে কোনো ধরনের বাড়তি চিনি যুক্ত করা হয় না। শিশুদের খাবারে চিনি যুক্ত না করার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ রয়েছে। কারণ শিশুখাদ্যে চিনি যুক্ত করা হলে তা স্থুলতা ও দীর্ঘস্থায়ী কয়েকটি রোগের কারণ হতে পারে।

ভারতেও নেসলের জনপ্রিয় কিছু শিশুখাদ্যের ব্র্যান্ডে উচ্চমাত্রায় চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পাবলিক আই নামে একটি সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেসলে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন দেশে শিশুদের জন্য দুধ এবং সিরিয়াল পণ্যে চিনি ও মধু যোগ করে। কেবল এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেই তাদের এই প্রবণতা দেখা গেছে। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পাবলিক আই’র প্রতিবেদনটি ভারত সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং পণ্যগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যাচাই করছে। গবেষণার ফলাফলগুলো একটি বৈজ্ঞানিক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুখাদ্যগুলোতে চিনি যোগ করা একটি বিপজ্জনক ও অপ্রয়োজনীয় অভ্যাস। শিশুরা মিষ্টি স্বাদে অভ্যস্ত হয় এবং আরও চিনিযুক্ত খাবারের সন্ধান শুরু করে। এটি একটি নেতিবাচক চক্র শুরু করে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে পুষ্টিভিত্তিক রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগ, যেমন- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ।
নেসলের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। ২০২১ সালে বিতর্কের মুখে পড়ে নেসলে সংস্থা। অভিযোগ, সংস্থার তৈরি খাদ্য, পানীয়ের মান ভাল নয়। নিয়ামক সংস্থার মাপকাঠিতে পাশ করেনি সেগুলি। সংস্থা মেনে নেয় যে, তাদের ৬০ শতাংশ শিশুখাদ্য, নরম পানীয়, কফি, পোষ্যের খাদ্য ‘স্বাস্থ্যকর’ নয়।

২০১৫ সালে নেসলে সংস্থার তৈরি অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য ‘ম্যাগি’ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, ম্যাগির মশলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লেড এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি)। ৩৮ হাজার টন ম্যাগি বাজার থেকে বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করা হয়। নেসলে সংস্থার শেয়ারের দর পড়ে যায়। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে তারা।

১৯৭৭ সালে আমেরিকায় বিতর্কের মুখে পড়েছিল নেসলে সংস্থা। অভিযোগ উঠেছিল, নিজেদের তৈরি ফর্মুলা দুধ বিক্রির জন্য স্তন্যপান করাতে মায়েদের নিরুৎসাহ করেছে। এই কারণে আমেরিকার পর ইউরোপেও বয়কট করা হয় নেসলের পণ্য। ১৯৮৪ সালে নেসলে জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জারি করা নীতি মেনে পণ্য বিক্রি করবে তারা। তার পরেই উঠে যায় বয়কট।

বাংলাদেশেও নেসলে পণ্যের বড় বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে ৯ টি পণ্য পাওয়া যায়। নেসলের সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চ-মাত্রার চিনির উপস্থিতির খবর ভারতে তোলপাড় শুরু হলেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রতিক্রিয়া এখনো লক্ষ করা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানা দরকার। বিষয়টি সম্পর্কে ভোক্তাদের স্পষ্ট ধারণা এবং করণীয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বক্তব্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপের দাবি রাখে।