বাংলাদেশে খাদ্যের অবিশ্বাস্য অপচয়!

আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মানা চাই


দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিবিএস খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। অথচ এই দেশেই কী না খাদ্যের অপচয় হয় অবিশ্বাস্যভাবে। বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে একজন ব্যক্তি গড়ে বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেন, যা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ভারতের চেয়েও বেশি। বিশ্বে ২০২২ সালে মোট অপচয় হওয়া খাবারের পরিমাণ ১০০ কোটি টনের বেশি, যা বিশ্ববাজারে আসা মোট খাবারের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। জাতিসংঘের ‘খাবার অপচয় সূচক প্রতিবেদন ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খাবারের এ অপচয়কে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাদ্য অপচয়ের বাংলাদেশের সংখ্যাতথ্য লজ্জারই। যে দেশে এখনও ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র সেখানে এ ধরনের অপচয় মেনে নেয়া যায় না। হতদরিদ্রের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত। দিনে এক-দুবেলা খাবার জুটে কি না সন্দেহ। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যের অপচয় ক্ষুধার্ত মানুষদের বিদ্রুপ করারও সামিল।

জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চলতি মাসের ২১ তারিখের বৈঠকে পরামর্শ দেয়া হয় যে, খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অপচয় রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সমোপযোগী। এখনও বাংলাদেশ যে দারিদ্র চক্রের মধ্যে আছে অপচয় রোধ করা গেলে অনেক মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আদৌও করণীয় ঠিক করা হবে কি না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরামর্শ অনেক ক্ষেত্রেই দেয়া হয় কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

অথচ জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য ভবিষ্যতে আরো খাদ্যের দরকার হবে। এ অবস্থায় খাদ্যের এই বিপুল অপচয় নিয়ে গবেষকরা প্রশ্ন তুলছেন। বিশ্বে-প্রতিবছর যত খাদ্য উৎপাদন হয়, এর ৩০ হতে ৫০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। নষ্ট হয়া এই খাদ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টন। খাদ্য অপচয়ে উন্নত দেশের মতও উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোও পিছিয়ে নেই; সেখানে অপচয়ের মূল কারণ মাঠ থেকে খাদ্যশস্য তোলা, প্রক্রিয়াকরণ এবং মজুতের প্রাচীন পদ্ধতি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাঠ থেকে ফসল তোলা, প্রক্রিয়াকরণ ও মজুত, এরপর সেগুলো বাজারে পরিবহন প্রতিটি পর্যায়েই অপচয় হচ্ছে।

বিশ্বজুড়েই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অতি আলোচিত একটি বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক বিষয়- যা দলগুলো দেশের মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু খাদ্য অপচয় প্রতিরোধ বিষয়টিকে সুপরিকল্পিত উপায়ে সিদ্ধান্ত পর্যায়ে নেয়া সম্ভব না হলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক সঙ্কটের বহুমুখি সমস্যার কারণ হতে পারে। তাতে করে পরিস্থিতিকে বেসামাল করে তুলতে পারে। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পরামর্শ উপেক্ষা করা কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানের কোনো সমস্যা ভবিষ্যতে আত্মঘাতি হতে পারে এমন কোনো বিষয়কে কাল বিলম্ব না করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়াই বাঞ্ছনীয় হবে।