ঋত্বিক ঘটকের জন্মদিন আজ

আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কিংবদন্তীতুল্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার ২, হৃষিকেশ দাশ রোডের ঝুলন বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর বোন প্রতীতি দেবীরও জন্ম হয়েছিল একই সাথে। অর্থাৎ তাঁরা ছিলেন যমজ ভাই-বোন। পিতা সুরেশ চন্দ্র ঘটক তখন ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মাতা ইন্দুবালা দেবী ছিলেন রাজশাহীর মেয়ে। প্রতীতি দেবীর এক লেখা থেকে জানা যায়, তাঁদের পূর্ব পুরুষ কাশ্মীর থেকে এসে পাবনায় বসতি স্থাপন করেন। একই সঙ্গে তাঁদের মাতুল-বংশ এসে রাজশাহীতে বসতি স্থাপন করেন।

ঋত্বিক ঘটকের কিশোর ও যুবা বয়সের অনেকটা সময় কেটেছে রাজশাহী শহরের মিয়াপাড়ায় নির্মিত বাড়িতে (যেটা এখন হোমিওপ্যাথিক কলেজ)। তিনি যখন ক্লাস ফোর-ফাইভের ছাত্র, তখন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করেন। আবার, ১৯৪১ সালের শেষের দিকে পরিবারের সঙ্গে রাজশাহী আসেন এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে আই.এ পাশ করেন। ঋত্বিক ঘটকের রাজশাহী-জীবনের কিছু কথা জানা যায় তাঁর বোন প্রতীতি দেবীর ‘আমার ভাই ঋত্বিক ঘটক’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে।

ঋত্বিক ঘটক নানা গুণের অধিকারী ছিলেন। কবিতা লেখা দিয়ে শুরু। তিনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তখনই তাঁর লেখা কবিতা ‘দেশ পত্রিকায়’ ছাপা হয়। কবিতার পর গল্প, গল্পের পর নাটক- সর্বক্ষেত্রেই ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ্য বিচরণ। ১৯৪৭-৪৮ সালে (এই সময় তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন) অনেকগুলো গল্প লিখেন। এগুলো দেশ, শনিবারের চিঠি, গল্প ভারতী, অগ্রণী, নতুন সাহিত্য, ফতোয়া প্রভৃতি পত্রে প্রকাশিত হয়। রাজশাহীতে থাকাকালীন তিনি নিজেও একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন- যার নাম ছিল ‘অভিধারা’।

১৯৪৮ সালে বহরমপুর কলেজ থেকে বি.এ পাস করার পর ঋত্বিক ঘটক কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ তে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই লেখাপড়ায় ইতি টানেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সময় তিনি নাটক লেখেন, অভিনয় করেন এবং নাট্য নির্দেশনাও প্রদান করেন। ১৯৪৮ সালে ‘নবান্ন’ নাটকে একটি ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করেন।

১৯৪৯ সালে নাট্যচক্র থেকে ‘নীল দর্পন’ করা হয়। এতে তিনি চাষীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৫০ সালে ঋত্বিকের প্রথম নাটক ‘জ্বালা’ লিখিত হয়। ১৯৪৯-১৯৫০ সালে বীরু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঢেউ’ নাটকে এক বৃদ্ধ কৃষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ১৯৫১ সালে ক্যালকাটা আর্ট থিয়েটারের ব্যানারে পানু পালের নাটক ‘ভাঙ্গা মন্দির’ অভিনীত হয়। এতেও ঋত্বিক অভিনয় করেন। সেক্সপীয়র অ্যানিভার্সারিতে উৎপল দত্তের পরিচালনায় শ্রীরঙ্গমে অভিনীত হয়, ‘ম্যাকবেথ’-এতে ডাইনির ভূমিকায় অভিনয় করেন ঋত্বিক ঘটক।

১৯৫২ সালে ঋত্বিক গোগলের ইন্সপেক্টর জেনারেল অবলম্বনে লেখেন ‘অফিসার’। নাটকটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। এক মাসে ৫২টি শো হয়েছিল। ব্রেখট-এর ‘গ্যালিলিও’ নাটকটিও অনুবাদ করেন তিনি। পানু পালের ‘ভোটের ভেট’ ও উৎপল দত্ত পরিচালিত ‘বিসর্জন’ নাটকেও তিনি অভিনয় করেন। ১৯৫৩ সালে গণনাট্য সংঘের সর্বভারতীয় বোম্বে সম্মেলনে ঋত্বিকের লেখা ‘দলিল’ নাটকটি প্রথম পুরস্কার পায়। পরিচালক এবং প্রধান অভিনেতা ঋত্বিক নিজে। তারপর গ্রুপ থিয়েটার গঠন করে ঋত্বিক ‘সাঁকো’ নামের একটি নাটক লিখেন।

১৯৭০ সালে লিখেন ‘সেই মেয়ে’ নাটক। ঋত্বিকের কর্মজীবনে ‘চাকরি জীবন’ বলে তেমন কিছুই নেই-শুধু পঞ্চাশ দশকের মধ্য ভাগে ৩০০ টাকার মাসিক বেতনে বোম্বের ফিল্মিস্থান স্টুডিওতে কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে চাকরি নেন। কিন্তু তিন মাসের বেশি তিনি সে চাকরি করতে পারেন নি। এরপর ১৯৬৫ তে পুনা ফিল্ম ইন্সটিটিউটের উপাধ্যক্ষ ছিলেন কিছুদিনের জন্য-এই তাঁর চাকরি জীবন, বাকিটা শুধুই চলচ্চিত্র সৃষ্টি। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তাঁর অমর সৃষ্টি।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক এক কিংবদন্তী পুরুষ। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।