এক দশকের সর্বনিম্ন আলুর চাষ

আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

*দামে খুশি চাষি
*বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
*বাস্তবায়ন নেই সরকারের প্রজ্ঞাপনের
*দীর্ঘশ্বাস তুলছেন ক্রেতারা

মাহাবুল ইসলাম:রাজশাহীতে এবার বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন আলুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদের কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি দপ্তর। যদিও দপ্তরটির ভাষ্য, চাহিদার চেয়ে রাজশাহীতে এখনো অনেক বেশি আলুর আবাদ হয়েছে। সুতরাং সংকটের কোনো বিষয় নেই। তবে বাজারের চিত্র বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভিন্ন। ভরা মৌসুমেও আলুর চড়ামূল্যে চাষিরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন। তবে দীর্ঘশ্বাস তুলছেন সাধারণ ক্রেতারা। এরমধ্যে রয়েছে ফড়িয়া ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। মৌসুম শেষে আলুর দাম নিয়ে নৈরাজ্যের শঙ্কা ক্রেতাদের।

আলুর চাষীরা বলছেন, এবার মাঠেই প্রতিকেজি আলু বিক্রি করে ১৪-১৫ টাকা লাভ পাচ্ছেন। এরআগে ভরা মৌসুমে এমন লাভবান হন নি। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) মাঠেই প্রতিকেজি আলু চাষীরা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। যা হাত ঘুরে ভোক্তাদের কিনতে হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে।

রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলিত ২০২৩-২৪ মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। বিগত বছরের চেয়ে আবাদের পরিমাণ কমলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা তেমন একটা কমে নি। গত বছর ৩৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন ছিলো ১০ লাখ ২২৩ মেট্রিক টন।

আর ২০১২-১৩ অর্থ-বছরে আলুর আবাদ ছিলো ৩৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর। যেখানে উৎপাদন ছিলো ৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরেই আলুর আবাদ সবচেয়ে কম।
দুর্গাপুরের কলনটিয়া গ্রামের আলুচাষি মামুন মÐল প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬০-৬৫ বস্তা। প্রতি বস্তায় আলু আছে ৭০ কেজি। তার জমি থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মামুন মÐল জানান, প্রথমে আলু হিমাগারে রেখে মৌসুমের শেষে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঠেই বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় সব আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। বিঘায় এবার তার ৭০-৭৫ হাজার টাকা লাভ এসেছে।

হাটকানপাড়া এলাকার আলুচাষী আব্দুস সালাম জানান, যতই দাম হোক শেষটা এবার দেখে ছাড়বো। আগেই আলু বিক্রি করবো না। গতবার আগে আলু বিক্রি করে চরম ঠকেছি। আগে আলু বেঁচে ব্যবসায়ীরা লাভ করলেও তারা কষ্ট করে কিছুই পান নি। এবার আর ঠকতে চান না। তাই পুরো জমির আড়াইশো বস্তা আলু হিমাগারে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এদিকে, বাজারে আলু কিনতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন ক্রেতারা। গত ১৫ মার্চ ২৯ নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। যে প্রজ্ঞাপনে প্রতিকেজি আলু পাইকারি বাজার মূল্য ২৩ দশমিক ৩০ টাকা ও খুচরা ২৮ দশমিক ৫৫ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাজশাহীর কোথাও সে মূল্যে আলু বিক্রি হচেছ না। প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমও দেখা যাচেছ না।

আলু ক্রেতা গাফফার আলী বলেন, বাজারে এখন সবজির দাম কিছুটা কম। তাছাড়া সবকিছুর দাম বেশি। আলুর দামটাও খুবই অস্বাভাবিক। এই দামে কিনে খেতে আমাদের ঘাম ঝরে যাচ্ছে। সরকার এগুলো কবে নিয়ন্ত্রণে আনবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ ও জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ