ঘন কুয়াশায় কুঁকড়ে যাচ্ছে ঈশ্বরদীর বোরো বীজতলা

আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ৩:০৮ অপরাহ্ণ


সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা) :


বছরের শুরু থেকেই পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা প্রবাহিত হলে বোরোসহ প্রায় সব ফসলের বীজতলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। এর আগের ১৫ দিনেও ১২ ডিগ্রির ওপরে ওঠেনি তাপমাত্রা। এই অবস্থায় বোরো ধানের কচি বীজতলার চারাগুলো গাঢ় সবুজ থেকে ক্রমেই কুঁকড়ে হলুদাভ হয়ে পড়ছে। কৃষকরা বলছেন, এই অবস্থা আরো এক সপ্তাহ চললে বোরো ধানের চারা তুলে জমিতে রোপন করার অবস্থায় থাকবে না।

এতে এ বছরে বোরো আবাদও হুমকির সম্মুখিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঈশ্বরদীতে এবার ৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলায় ধানের চারা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও নিম্নমুখি তাপমাত্রার কারণে এখনো অর্ধেক বীজতলা প্রস্তুত করা যায়নি। যেটুকু হয়েছে তার অধিকাংশই ক্ষতির মুখে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলায় আলাদা যত্ন নিয়েও হলুদাভ হওয়া থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না ধানের চারা। কৃষি বিভাগ থেকে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন বীজতলা ঢেকে রাখা, কুয়াশা ঝেড়ে ফেলা ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশার সাথে সাথে ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রবাহিত হচ্ছে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি পর্যন্ত। বছরের প্রথম দিনে গত ১ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ০৮ ডিগ্রি প্রবাহিত হলেও এর পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমশঃ কমে আসছে।

২ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ৩ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি, ৪ ও ৫ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং শনিবার (৫ জানুয়াুির)ঈশ্বরদীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থায় প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার পাশাপাশি জনজীবন ও গবাদি পশু নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক।

উপজেলার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, চারা রোপন করার যোগ্য হয়ে ওঠার আগেই তার বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশার প্রভাব থেকে কোনমতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। উপজেলার মানিকনগর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম সরদার বলেন, প্রায় দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপনের জন্য জমি প্রস্তুুত করে রেখেও চারা উঠাতে না পারায় আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। শীতের প্রকোপ না কমলে বীজতলা থেকে চারা ওঠানো এবং জমিতে তা রোপন করা যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন তার মত আরো অনেক কৃষক।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, সাধারণতঃ ১৮ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা প্রবাহিত হলে বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়ে। সেখানে ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১০.০৮ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। এই অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ২১ হেক্টর জমিতে বীজতলায় বোরো ধানের চারা প্রস্তুত হয়েছে। বাকি জমিতে এখনো চারা দেয়া সম্ভব হয়নি।
কুয়াশা থেকে চারা রক্ষা করতে বীজতলা ঢেকে রাখা, প্রতিদিন সকালে চারায় জমে থাকা কুয়াশা ঝেড়ে ফেলা ও নিয়ম করে সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। এর পরও বীজতলার চারা সবুজ রাখতে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ এবং রাতে সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার।