আম চাষিদের স্বপ্ন ভঙ্গ, ঈদের আনন্দ ম্লান

আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :


আমের রাজধানীতে আম নেই, হতাশ আমচাষী ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক। চলতি বছর শীতের প্রকোপ থাকায় বাগানগুলোতে মুকুল আসতে দেরি হয়। চৈত্রের একটা বৃষ্টিতে (১৫ দিন আগে) বাগানিদের সকল স্বপ্ন হয়ে গেছে। আম নেই আছে শুধু ডাঠা। বিগত দশ বছরের মধ্যে আম উৎপাদনের এমন অবস্থা হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের হাসি-কান্না আমাকে ঘিরেই। আমের ফলন আর দামের ওপরই নির্ভর করে, কেমন যাবে তাদের পুরো বছর। চলতি মৌসুম আমের ‘অফ সিজন’। এবার গাছে মুকুল কম ছিল। অল্প মুকুল নিয়ে টিমটিম করে জ্বলছিল কিছুটা আশার আলো। তবে গত. দুই সপ্তাহের আগের চৈত্রের বৃষ্টিতে চোখের সামনে ঝরে গেছে এসব আমের মুকুল।

আমের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। আমের স্বপ্ন তো শেষ; কিভাবে চলবে জীবন, ঋণের দায় মিটাবেন কিভাবে, এই ভাবনায় দিন পার করছেন চাষিরা। তাদের ঘরে নেই ইদের আনন্দ। প্রিয়জনদের জন্য ইদে নতুন পোশাক কিনতে বাজারে যাওয়ার টাকা নেই, কেনা হয়নি সেমাই চিনি। এবাররের ইদকে সাধারণ একটি দিন হিসেবে পালন করতে হবে তাদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কিছুদিন আগেও যেসব গাছে ছিল সোনালী মুকুল। সেইসব গাছ এখন মুকুল শূন্য। স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ভালো নেই। হাসি নেই অনেকের মুখে। কপালে চিন্তার ভাঁজ। আমের রাজধানী অধ্যুষিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমবেশি সব এলাকার মুকুলই ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে সদর উপজেলার কৃষকরা।

এ জেলা এখনও কৃষি-অর্থনীতিনির্ভর জীবন ব্যবস্থা। জেলার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষই আমের উপর নির্ভরশীল। আমে স্বপ্নে বিভোর থাকে সবাই। সারা বছরের জীবনযাপন ব্যয় আসে আম থেকেই। আমের শক্তির উপর ভর চলে এখানকার অর্থনীতির চাকা। আম বিক্রির টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কাছে এবারের ইদ-আনন্দ উৎসব শুধুই দুঃস্বপ্ন। ইদ যতই ঘনিয়ে আসছে, চাষিদের দুঃখ, বেদনা ততই ভারী হচ্ছে। আমের সর্বনাশ আর নিত্যপণ্যের উর্ধগতির চাপে দিশেহারা মানুষ। আমচাষিদের বক্তব্য হলো- বাস্তবে ৭৫ ভাগ আমের মুকুল ঝরে গেছে। এবার উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

চাষিরা আমগাছের পরিচর্যা করতে গিয়ে দেনায় জর্জরিত। আছে এনজিওদের ঋণের কিস্তির চাপ। কীভাবে দেনা মিটবে? কীভাবে চলবে সংসারের চাকা? এ চিন্তায় একমাত্র সম্বল আম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এমনই একজন সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মেরাজুল ইসলাম। ঈদের কেনাকাটা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে মুকুল ঝরে গেছে।

পুরো বাগানে কোনো আম হবে না। এই শোকের মধ্যে ইদ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। এবছর সন্তানদের জন্য কেনাকাটাও করতেন পারবেন না। তার দাবি, আমবাগান পরিচর্যা করেছেন ধারদেনা করে। বাগানে আম থাকলে ধারদেনা করে ইদও চালিয়ে নিতেন। সন্তানদের জন্য কিনতে নতুন পোশাক । কিন্তু সেই সুযোগ তো নেই। এবার ইদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। তাছাড়াও চাল, ডাল, তেলের দাম তো বাড়ছে। এমন অবস্থায় জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে।

একই এলাকার আরেক আমচাষি সেতাউর রহমান বাদশা, আমের মুকুলের এই সময়ে বাগান পরিচর্যায় বাড়তি খরচ তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি। এমন পরিস্থিতিতে রমজান মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতেই নাজেহাল। এরমধ্যে বৃষ্টি আর বিরূপ আবহাওয়ায় আমের মুকুল ঝরে গেছে। এবার ৪০০ মণ আম হবে আশা ছিল, কিন্তু সব শেষ হয়েগেছে। ইদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। ওই এলাকায় আকবর আলী, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম সবার বক্তব্য একই।

আম উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম বলেন, আমি আগে থেকেই বলে আসছি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে আম সেক্টরে। বৈরি আবহাওয়া আমের জন্য হুমকি। এবার আমের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমের যখন প্রথম মুকুল আসে তখন থেকেই শঙ্কায় ছিলাম। দেরিতে আসা মুকুলের কোনো ভরসা নেই। সবশেষ বৃষ্টিতে আমের মুকুলে ঝরে গেছে।