পোরশায় একটি ‘মিনি পুকুর’ : বদলে দিয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবকের ভাগ্য

আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ


ডিএম রাশেদ পোরশা (নওগাঁ) :


নাইমুল ইসলাম নাঈম। তিনি এইচএসসি পাস করে নওগাঁর পোরশা সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন, কিন্তু করোনা মহামারিকালে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েন। বেকার বসে থাকা এবং পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে চলে আসতে হয় বাপ-দাদার পেশা কৃষি কাজে। বরেন্দ্র অঞ্চল এখন আমের জন্য বিখ্যাত। তিনি আম চাষ করার পরিকল্পনা করেন।

গত বছর তার গ্রামের পাশের মাঠে স্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট থেকে ১২ বছরের জন্য সোয়া ২ বিঘা জমি লিজ নেন। তৈরি করেন আম্ব্রপালী জাতের আমবাগান। আম বাগানের মধ্যে থাকা ছোট গর্তকে একটি বেসরকারি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় পুনঃখনন করে তৈরি করেন একটি মিনি পুকুর।

ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করে, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করে শিক্ষিত এই বেকার যুবকের ভাগ্যের চাকা ঘোরা শুরু করেছে।
নাইমুল ইসলাম নাঈম নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের ছাওড় দক্ষিণপাড়া গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে। তার এই বাগানটি ছাওড়ের বরেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন।

নাইমুল ইসলাম নাঈম জানান, আমবাগান তৈরির পরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় পানির অভাবে গাছ মরতে শুরু করে। বাগানটি রাস্তার সাথে হওয়ায় মরা গাছগুলি ওই এলাকায় কাজ করা উন্নয়ন সিসিডিবি’র কর্মকর্তাদের নজরে আসে। সংস্থার পক্ষ হতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে ওই বাগানে থাকা একটি ছোট গর্তকে পুনঃখনন করে আনুমানিক ১ শতাংশ জমির উপর একটি মিনি পুকুর তৈরি করা হয়।

মিনি পুকুর মূলত আকাশের বৃষ্টির পানি ধরে রেখে প্রয়োজন ও পরিমাণ মতো গাছে পানি সেচ দেয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। ওই পুকুর থেকে বাগানের গাছ বাঁচিয়েও সিসিডিবি’র সহযোগিতায় পুকুর পাড়ে বেগুন, লাউ, টমেটো, সিম, করলা, পটল, গাজরসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজি চাষ করেন নাঈম। এর পরেও ওই মিনি পুকুরে পানি অবশিষ্ট থাকায় সিসিডিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমবাগানের সাথি ফসল হিসাবে তিনি চাষ করেন মিষ্টি কুমড়া। বিনামূল্যে উন্নতমানের মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ফেরোমেন ফাঁদ, হলুদ আঠাঁলো ফাঁদ, ২/৩জি কাটিং পদ্ধতি, কেঁচো সারের ব্যবহার, মালচিং ইত্যাদি জৈব পদ্ধত্তি চর্চা করার জন্য সহায়তা করে আসছে সিসিডিবি।

চাষি নাঈম জানান, আমবাগান বাদে শুধু মিষ্টি কুমড়া পরিচর্যায় এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। বাগানে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রয়েছে ৮৫০টি। প্রতি গাছে ফল রয়েছে ৩-৪টি। তবে গাছে পর্যায়ক্রমে ফল ধরা চলমান রয়েছে। বর্তমান স্থানীয় বাজারে এই ফল বিক্রি হচ্ছে সাইজ ভেদে ৫০-৬০ টাকা প্রতিটি। শুধু মিষ্টি কুমড়া বিক্রয় করে দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশা করছেন। এছাড়াও তিনি তার পুকুরপাড় থেকে বিভিন্ন জাতের শাকসবজি বিক্রি করে প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করছেন। এর সবগুলো ওই মিনি পুকুরের সংরক্ষিত বৃষ্টির পানির কারণে সম্ভপর হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিসিডিবি-এর প্রোমোটিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট কমিউনিটিস ইন বাংলাদেশ-২ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী স্টিভ রায় রুপন বলেন, আমরা প্রকল্পের কাজের জন্য ওই বাগান সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। পানির অভাবে বাগানের গাছ মরে যাচ্ছে দেখে প্রকল্প থেকে উপকারভোগী সদস্যকে ‘জলবায়ু অভিযোজিত কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রসারের জন্য’ ওই বাগানে থাকা একটি ছোট গর্তকে পুনঃখনন করে মিনি পুকুর তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

খরাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় খরা মৌসুমে এই এলাকার অনেক পুকুরই পানিশূন্য হয়ে যায়। ওই মিনি পুকুরে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ত্রিপল বিছিয়ে দিয়েছি। এখানে পানিতে কচুরিপানা এবং তালপাতা রাখা হয়েছে যাতে পানি কম বাষ্প হয় এবং বেশি দিন পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয়। তিনি আরো জানান, খরাপ্রবণ এই এলাকার বিভিন্ন জমিতে বিশেষ করে নতুন ফলবাগানগুলোতে এমন মিনি পুকুর খনন করলে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখা যাবে। একই সাথে বৃষ্টির পানি ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, আমরা আমচাষি কৃষকদের আম বাগানে সাথি ফসল হিসাবে এই জাতীয় শাকসবজি ও মসলার মধ্যে পেঁয়াজ রসুন চাষ করতে বলছি। এতে আমগাছের পরিচর্যায় যে খরচ হবে তা এখান থেকেই উঠে আসবে। সিসিডিবির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এমন মিনি পুকুর এই এলাকার বাগানগুলোতে তৈরি করতে পারলে জমিতে সেচের পানির সংকট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।