রাণীনগরে জিরার বাম্পার ফলনে খুশি চাষী জহুরুল

আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪, ১:২৩ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: মসলাজাতীয় অর্থকরি ফসল জিরা। বর্তমানে দেশে জিরার চাহিদার পুরোটায় আমদানি নির্ভর। পরীক্ষামূলক এই মূল্যবান জিরা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহরুল ইসলাম বাদল। জিরা চাষে বাম্পার ফলনে জহুরুল বেশ খুশি। একই সাথে এলাকায় জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য কৃষকদেরও। দেশের মাটিতে চাষকৃত জিরা দেখতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দর্শনার্থীরা।

কৃষক জহুরুল জানান, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন দামি উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় জিরাচাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। অনলাইনে জিরার চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে বেগুনি ফুলজাতের ৫০০ গ্রাম জিরাবীজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা যেমন চাষ করা হয়, একইভাবে পাঁচ শতক জমিতে এই জিরাবীজ বপণ করেন জহুরুল ইসলাম।

গাছে যত ফুল ছিলো ততই জিরা ধরেছে। বর্তমানে জিরা পরিপক্ক হয়েছে। পাঁচ শতক জমি থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি জিরা পাওয়ার আশা করছেন তিনি। জহুরুলের জমিতে উৎপাদিত জিরার গন্ধ ও স্বাদ অতুলনীয় এবং বাজারে পাওয়া জিরার চেয়ে অনেক উন্নত। রোগবালাই একেবারেই নেই এবং পানি সেচও দিতে হয় না। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে দেশের মাটিতে জিরারি মত দামি মসলা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করেনে কৃষক জহুরুল।

শীতকালীন এই ফসলের বীজ বপণের তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে জিরা ঘরে তুলতে। দেশের মাটিতে বিশেষ করে নওগাঁর মাটিতে জিরাসহ আরো অন্যান্য দামি মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব সেটাই প্রমাণ করেছেন জহুরুল ইসলাম। আগামীতে তিনি আরো বেশি পরিমাণ জমিতে জিরার আবাদ করবেন বলে জানান।

বগুড়ার গাবতলী এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী মোতালেব হোসেন জানান, দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো জিরার গাছ দেখতে এসেছি। জহুরুল ভাইয়ের জমিতে উৎপাদিত জিরার গন্ধ অতুলনীয়। আরো কৃষকরা যদি জিরার চাষ করলে আমদানি নির্ভর এই ফসলটি বাজারে কম দামে পাওয়া সম্ভব। আমিও আগামীতে কিছু জমিতে জহুরুল ভাইয়ের মতো জিরার আবাদ করবো।

একডালা ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, এটা ভালোলাগার একটি বিষয় যে আমার এলাকার একজন সৌখিন কৃষক জহুরুল জিরা চাষে সফল হয়েছেন। তিনি জিরা চাষে বাম্পারফলন পেয়ে দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। জহুরুলের মতো আগ্রহী কৃষকদের মাধ্যমে জিরার মতো অন্য দামি ফসল চাষের প্রবণতা শুরু হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন, আমরা পরীক্ষামূলক জিরা চাষে সফল হয়েছি। কৃষক জহুরুলের মাধ্যমে পুরো দেশের কৃষকদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হলো যে, খুব সহজেই দেশের মাটিতে জিরার মতো মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব। জিরা চাষের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে সরিষার মতো করে জিরা চাষ করে ফলন পাওয়া সম্ভব। এছাড়া জিরা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ও সেচের প্রয়োজন হয় না বলে খরচও অনেক কম। নওগাঁয় জিরা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই জিরাসহ অন্যান্য নতুন দামি ফসল চাষে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।