দেশে বাড়ছে বিয়েবিচ্ছেদ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

সমাধান কোন্ পথে?

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২ নামের এক জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দেশে বিয়ের হার বৃদ্ধির সাথে বেড়েছে বিয়েবিচ্ছেদ বা তালাকের সংখ্যাও। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক এবং বনিবনার অভাব বিচ্ছেদের মূল কারণ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। বনিবনার অভাবে বিয়েবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে সমর্থহীনততার কারণে রাজশাহীতে বিয়েবিচ্ছেদ বেশি, এটি কম চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর কৃত ৩১ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।

জরিপ তথ্যমতে, ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোভিড মহামারিকালীন অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার যোগসূত্র দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২০ ও ২১ সালের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২২ সালে বিয়ের হার বেড়েছে। গ্রামে এ হার বেশি। নারী ও পুরুষের পৃথকভাবে সাধারণ বিয়েবিচ্ছেদ হিসেব করা হয়েছে। ২০২১ সালে নারীদের সাধারণ বিয়েবিচ্ছেদের হার ছিল ২%-এর কিছুটা কম। সেটা পরের বছর বেড়ে ৩.৬%-এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে হারটি ২০২১ সালে ছিল ২%-এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে হয় ৩.৮%। বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়া; জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩% এই কারণের কথা বলেছেন। আর দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতার কারণে ২২% বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে। ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।

বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যার বৃদ্ধি গভীর উদ্বেগের কারণ। এটা সামাজিক পর্যায়ের তিব্র অস্থিরতারই সাক্ষ্য দেয়। পরিবারগুলোতে যে অস্থিরতাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ফেসবুক। বলা হচ্ছে, ফেসবুকের বদৌলতেও পরকীয়া উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক জরিপে বলা হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ বিয়েবিচ্ছেদের জন্য ফেসবুক দায়ি। দৈনন্দিন জীবন শেয়ার করা, দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি একাকীত্বের সঙ্গ বা জীবনসঙ্গীর সন্ধানও মিলছে ফেসবুকে। অনেকের জন্য কাছে ফেসবুক হয়ে উঠেছে তাদের দ্বিতীয় জীবন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই এই ফেসবুকের কারণে বেড়েছে বিয়ে বিচ্ছেদের হার। বিবাহিতরা অনলাইনে নতুন কারো সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন বা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

সব কিছু মিলেই পরিবারকে যে গভীরভাবে অস্থির করে তুলছে। তাতে সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থার মধ্যেই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা বৃহত্তর সামাজিক ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সহিষ্ণুতার সঙ্কটও দেখা দিতে পারে। বিষয়টির সমাধানের ব্যাপারে সরকার ও সমাজ বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। যাতে করে সমাজের এই দ্বান্দ্বিকতার একটা সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়।