পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে কারা?

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

গভীর সঙ্কটের দিকেই যাচ্ছে দেশটি!

পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও ফল প্রকাশ করেনি দেশটির নির্বাচন কমিশন। স্বাভাবিকভাবেই ফল প্রকাশ না করায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দেশটির বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিবাদ করা গুলি চালানো হয়েছে একটি দলের প্রধানের ওপর। একই কারণে রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

তবে পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত যত আসনের ফল প্রকাশ হয়েছে তাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেনি কোনো রাজনৈতিক দল। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮:টা পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্যে ইমরান খানের পাকিস্তান পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ৯৯ আসনে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএলএন) জয়ী ৭১ আসনে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিলওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৩ টি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়াও এমকিউএম ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যান্য দল পেয়েছে ১০টি আসন। এখনো কয়েকটি আসনের ফলাফল বাকি রয়েছে।

কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নির্বাচনে জয় দাবি করেছেন এবং তার কর্মী-সমর্থকদেরকে এই বিজয় উদযাপন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আসন সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলছেন, তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগই এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল। এই কারণে তিনি অন্যদেরও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানে নির্বাচনের দিন ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এবার ফলাফল ঘোষণার মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারেও। বৈশ্বিক ইন্টারনেট সেবা পর্যবেক্ষক নেটব্লকস জানিয়েছে, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গোটা পাকিস্তান হতে এক্সের (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারীরা সমস্যার কথা জানিয়েছেন।

নির্বাচনকে যে প্রভাবিত করা হচ্ছে এটা যে কারোরই না বোঝার কোনো কারণ নেই। এটা পরিস্কার হয়েছে যে, একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট তৈরিরও নেপথ্যের অভিসন্ধি আছে। পাকিস্তানের নির্বাচনি ব্যবস্থা দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। একই সাথে দেশটিতে কোনো দলই ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন করতে পারে নি। কেননা দেশটির সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনা করে আসছে। মেয়াদ শেষ করা না করার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বশেষ ১৬তম জাতীয় নির্বাচনে সেই প্রভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোয়ালিশন সরকার সেনাবাহিনীর জন্য স্বস্তিরও। তবে ইমরান খানের দল পিটিআই যে এতো ব্যাপকভাবে জনসমর্থনে এগিয়ে থাকবে সেটার অংকটা যথার্ষ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। নেওয়াজ শরিফের দলও পিটিআই-এর এমন জনসমর্থন পাবে তা ভাবতে পারে নি। অথচ নেয়াজ শরিফকেই সেনাবাহিনীর আদর্শপুষ্ট বলে ধরা হচ্ছে।

কিন্তু পিটিআই-এর প্রবল জনসমর্থন অন্য সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। যে কারণে নির্বাচন কমিশন ৪৮ ঘণ্টার আপেক্ষার পরও পূর্ণ ফলাফল দিতে পারে রি। ভোট প্রভাবিত করতেই ফলাফল দেয়া বন্ধ করতে হয়েছে। এখন কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হলেও পিটিআই-এর স্বতন্ত্র জয়ীদের প্রথমে সুযোগ দিতে হবে। এ নিয়েই মূলত সেনাবাহিনী ও নেওয়াজ শরিফের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে। তবে বিষয় মোটেও সহজ নয়। পাকিস্তানে আগামীতে চরম অস্থিরতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেটা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে আরো ভঙ্গুরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যা রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো গভীর করবে।