এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা II বাড়ছে বোরো আবাদ, ব্যস্ত চাষী, রোপণ প্রায় ৩৬ শতাংশ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ণ


মাহাবুল ইসলাম:রবি শস্য উত্তোলনের পূর্বেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে অনেকে বোরো ধান লাগাতেও শুরু করেছেন। আবার কেউ বীজতলায় চারা প্রস্তুত করছেন। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন। আর এই সর্ব-প্রস্তুতির মধ্যেই বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি দপ্তর। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার বোরো আবাদ ও উৎপাদনসহ বিগত বছরের তুলনায় হেক্টর প্রতি ফলনও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বোরো আবাদ রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত এক দশকের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ বোর আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ফসল হানি না ঘটলে পূর্বাপর লক্ষ্যমাত্রার মতোই ছাড়িয়ে যাবে আবাদ ও উৎপাদন।

দপ্তরটির তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৭০ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোর আবাদ করা হবে। যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল। যা গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। আর উৎপাদনে ১৩ হাজার ৬৩১ মেট্রিক টন বেশি।

এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬৫ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিলো ২ লাখ ৭১ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিলো ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭০ হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন,

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৮৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৬৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে ৬৯ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৬৮ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৬৮ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন চাল। আর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৪ দশমিক ০৬ থেকে ২০২২-২২ অর্থ বছরে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৪ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে, চাষীরা বলছেন, বোরো আবাদের ক্ষেত্রে ব্যায়টা বেশি হয়। উৎপাদন ভালো ও ধানের নায্য দাম না পেলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। বিশেষ করে সেচের ব্যায়টা বোরো আবাদে অনেক বেশি। বৃষ্টিপাত হলে সেচের ব্যায় কিছুটা কম হয়। এবার শুরুর দিকে বোরো বীজতলা ভালো হয় নি। অগ্রিম বীজতলা যারা করেছিলেন, অনেকের ধানের চারার মান খারাপ হয়েছে। এছাড়া এবার সার-কিটনাশকের দামও বেশি। তবে উৎপাদন ভালো হলে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী চাষীরা।

পবা উপজেলার দামকুড়ার বোরো চাষী আনসার আলী জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। তার জমিটা একটু উঁচু। একারণে সেচের পরিমাণটাও বেশি লাগে। আর দ্ইু বিঘা জমির জন্য চারা প্রস্তুত, লাগানো, জমি প্রস্তুত ও সার-কিটনাশক মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সামনে আরও অনেক খরচ বাকি। আশা করছি উৎপাদন ভালো হবে।

সরজমিতে পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলার ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন বোরো আবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। কোথাও বীজতলা প্রস্তুত হচ্ছে। কেউ বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে জমিতে লাগাচেছন। আবার কেউ সরিষা কেটে বোরো ধানের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।

বোর চাষী ইব্রাহিম আলী বলেন, এবার রোদ ও কুয়াশার কারণে ধানের চারা একটু খারাপ হয়েছে। আশানুরুপ করতে পারি নি। তবে জমিতে চারা লাগানোর পর ধীরে ধীরে বাড়ছে। আবহওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, আলু ও সরিষা আবাদ তুলে বোরো লাগানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৬ শতাংশ বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রোপণ হয়ে যাবে। পুরো মাঠ সবুজ হয়ে আসবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ