মুজিব-কামারুজ্জামান সম্পর্ক

আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

প্রফেসর ড. আবদুল খালেক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। জন্ম তারিখ ১৭ই মার্চ ১৯২০ সাল। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। এবার আমরা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পরিবারের দিকে একটু দৃষ্টি দিতে পারি। জনাব কামারুজ্জামানের জন্ম তারিখ ১৯২৩ সালের ২৬শে জুন। তাঁর জন্ম হয় নাটোর জেলার (বর্তমান) বাগাতিপাড়া থানার মালঞ্চী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে। কামারুজ্জামানের বাবার নাম আবদুল হামিদ মিয়া (১৮৮৭-১৯৭৬)। দাদার নাম হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার (১৮৪৮-১৯৩৬)।

১৮৪৮ সালে রাজশাহীর পুঠিয়ার ভেলনা গ্রামে জন্ম নেয়া হাজী লাল মোহাম্মদ নানা গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি জন্মেছিলেন দরিদ্র মুসলিম পরিবারে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে হারিয়েছিলেন পিতাকে। ফলে মাকে নিয়ে নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে কাটে তার বাল্য ও কৈশোরকাল। ভাগ্যান্বেষণে তিনি নিজ গ্রাম থেকে স্থায়ীভাবে চলে আসেন রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ এলাকায়।

কামারুজ্জামানের পিতা আবদুল হামিদ মিয়া (১৮৮৭-১৯৭৬) ছিলেন বাবা হাজী লাল মোহাম্মদ সরদারের যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন যখন জোরদার হতে থাকে, তখন তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বকে মেনে নিয়েছিলেন। ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের মধ্যে তখন বিভাজন ছিল। জিন্নাহ’র সাথে সোহরাওয়ার্দী’র বেশ কিছু মত পার্থক্য ছিল। সোহরাওয়ার্দী’র সাথে যে জনাব আবদুল হামিদ মিয়ার সুসম্পর্ক ছিল, তার প্রমাণ ১৯৩৭ সালে সোহরাওয়ার্দী যখন রাজশাহীতে আসেন তখন তিনি জনাব আবদুল হামিদ মিয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। সে সময় জনাব কামারুজ্জামানের বয়স ১৪ বছর মত হবে।

বাবা আবদুল হামিদ সোহরাওয়ার্দী’র সাথে তার ছেলে কামারুজ্জামানের আলাপ পরিচয় করিয়ে দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগের সাংগঠনিক কাজে রাজশাহী এসেছিলেন। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় সোহরাওয়ার্দী’র উদ্যোগে জনাব আবদুল হামিদ মিয়াকে সভাপতি এবং বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব মাদার বখশকে সম্পাদক নির্বাচিত করে রাজশাহীতে মুসলিম লীগের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়। (সূত্র: শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্মারকগ্রন্থ, ১ম খণ্ড, ২০২০, পৃ.)

সময়ের বিচারে দেখা যায় ১৯৩৭ সালে সোহরাওয়ার্দী’র সাথে কামারুজ্জামানের সাক্ষাৎ ঘটে রাজশাহীতে তাঁর নিজ পিতৃগৃহে। অপরদিকে ১৯৩৮ সালে সোহরাওয়ার্দী’র সাথে শেখ মুজিবের সাক্ষাৎ হয় গোপালগঞ্জে। সে সময় শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ছিলেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং সোহরাওয়ার্দী ছিলেন শ্রমমন্ত্রী।

১৯৩৭ সালে সোহরাওয়ার্দী যখন রাজশাহীতে এসে জনাব কামারুজ্জামানের পৈত্রিক ভবন কাদিরগঞ্জে বসে মুসলিম লীগ গঠন করেন তখন ১৪ বছর বয়সের কামারুজ্জামানের ভূমিকা কেমন ছিল আমাদের জানা নেই; তবে পিতার রাজনৈতিক কার্যকলাপ তিনি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। অপরদিকে ১৯৩৯ সালে তরুণ শেখ মুজিব নিজেই সোহরাওয়ার্দী’র সাথে পরামর্শ করে গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। লক্ষ্য করবার বিষয় সোহরাওয়ার্দী’র পৃষ্ঠপোষকতায় খুব কাছাকাছি সময়ে ১৯৩৭ সালে রাজশাহী এবং ১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগ নামের দলটি গঠিত হয়। এতে প্রতীয়মান হয় সে সময় শেখ মুজিব এবং কামারুজ্জামান পরিবার একই রাজনৈতিক মঞ্চে অবস্থান করছিলেন। কোন রকম পার্থক্য ছিল না।

শেখ মুজিব বয়সে বড় হলেও কোলকাতায় তাঁদের ডিগ্রি পর্যায়ের পঠন-পাঠনের সময় প্রায় একই। ১৯৪৪-১৯৪৭ মত হবে। শেখ মুজিব লেখাপড়া করেছেন ইসলামীয়া কলেজে, কামারুজ্জামান লেখাপড়া করেছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে, দু’জনই সোহরাওয়ার্দী’র পূর্ব পরিচিত এবং দু’জনই তার স্নেহের পাত্র। পাকিস্তান আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কোলকাতায় যে সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব এবং কামারুজ্জামানের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিনিময় ঘটেছে, এ সম্পর্কে কোনরকম সন্দেহ নেই। তবে সে সময় কামারুজ্জামান রাজনীতি অপেক্ষা লেখাপড়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। যার ফলে মুজিব রাজনীতি নিয়ে যতটা সক্রিয় ছিলেন, কামারুজ্জামান ততটা নন। পরবর্তী আলোচনায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

সোহরাওয়ার্দী’র নেতৃত্বে শেখ মুজিব যে ধরনের পাকিস্তান রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন ১৯৪৭ সালে সে পাকিস্তান রাষ্ট্র হয় নি। কোলকাতায় শুরু হয়ে যায় মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। যা নিয়ন্ত্রণ করবার শক্তি সোহরাওয়ার্দী বা শেখ মুজিবের ছিল না। বাধ্য হয়ে শেখ মুজিব ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্র আন্দোলন এবং ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। ১৯৪৮ সালে শেখ মুজিব জন্ম দেন মুসলীম ছাত্রলীগ নামের একটি সংগঠনের। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যার সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবকে করা হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে শেখ মুজিব তখন জেলখানায় বন্দি।
১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে মোকাবিলা করতে গিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। শেখ মুজিব তখন যুক্ত ফ্রন্টের সক্রিয় তরুণ নেতা। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের কাছে নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ মুজিব নেতা হিসেবে দেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন।

রাজশাহীতে সে সময় আওয়ামী মুসলিম লীগের পক্ষে কাজ করছিলেন এডভোকেট আবদুস সালাম, এডভোকেট মজিবর রহমান প্রমুখ। রাজশাহীতে তখন আওয়ামী মুসলিম লীগের সাংগঠনিক কাঠামো বেশ দুর্বল। ১৯৫৬-৫৭ সালের দিকে শেখ মুজিব রাজশাহীতে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বের অনুসন্ধান করতে থাকেন। জনাব কামারুজ্জামান তাঁর পূর্ব পরিচিত। কামারুজ্জামানের রাজনৈতিক সাংগঠনিক শক্তিমত্তার খবর শেখ মুজিবের অজানা ছিল না। শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দেন কামারুজ্জামান। আনুষ্ঠানিকভাবে জনাব কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ১৯৫৬ সালে। এবং একই সাথে তিনি রাজশাহী পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। শুরুতেই জনাব কামারুজ্জামানকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কামারুজ্জামান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেবার পরপরই রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শুরু হয় শেখ মুজিবের সাথে জনাব কামারুজ্জামানের পথ চলা। একসাথে পথ চলতে গিয়ে শেখ মুজিবের সাথে কামারুজ্জামানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়ে উঠতে থাকে।

১৯৫৬ সালে জনাব কামারুজ্জামান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেবার পর ১৯৫৮ সালে দেশে জেনারেল আইউব সামরিক শাসন জারি করেন। দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের বড়মাপের নেতাদেরকে জেলাখানায় বন্দি করে রাখা হয়। আওয়ামী লীগের জন্য সে এক মহাদুঃসময়। জেনারেল আইউবের মূল প্রতিপক্ষ তখন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে নির্মূল করবার জন্য জেনারেল আইউব নানা কুট-কৌশল গ্রহণ করতে থাকেন। সামরিক বাহিনীর নেতা থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা হবার লক্ষ্যে তিনি এই সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস কর। সেই লক্ষ্যে দেশে মৌলিক গণতন্ত্র প্রথা চালু করা হয়। ১৯৬২ সালে মৌলিক গণতন্ত্র মোতাবেক পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। অত্যন্ত প্রতিকূলতার মধ্যে ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে জনাব কামারুজ্জামান রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয়বার রাজশাহী থেকে মৌলিক গণতন্ত্র প্রথায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয় ১৯৬২-৬৪ এবং ১৯৬৫-৬৯ পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সম্মিলিত বিরোধী দলের সম্পাদক ছিলেন তিনি। এটি তার জনপ্রিয়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব যখন ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন শুরু করেন, জনাব কামারুজ্জামান সেই আন্দোলনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে থাকেন। ৬ দফার আন্দোলনের মাধ্যমে জনাব কামারুজ্জামান শেখ মুজিবের কাছে আরও বেশি আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। যার ফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগে কামারুজ্জামান অপেক্ষা অনেক সিনিয়র নেতা থাকতেও জনাব কামারুজ্জামানকে ১৯৬৭-১৯৭০ পর্যন্ত নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেয়া হয়। ১৯৬৭ সালের ২৭ আগস্ট নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ১৯৭০ সালের ৬ জুন হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় এবং এই কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমানকে পুনরায় সভাপতি এবং জনাব কামারুজ্জামানকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৭ ও ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জনাব জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি তারিখে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি বড় রকমের পরিবর্তন আনা হয়। পরির্তন আনা হয় আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে। পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী সভার সদস্যগণ দলের কর্মকর্তা পদে থাকতে পারবেন না বিধায় বঙ্গবন্ধু দলের সভাপতি পদ ত্যাগ করেন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাঁকে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করতে হয়। তবে বঙ্গবন্ধু জানতেন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী রাখতে দলের সবচেয়ে সৎ এবং ত্যাগী ব্যক্তিকেই সভাপতি রাখতে হবে। কিন্তু মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের দায়িত্ব নেয়ার মত ত্যাগী নেতা পাওয়া খুব সহজ ছিল না। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন জনাব কামারুজ্জামান এই ত্যাগ স্বীকারে কোনরকম দ্বিধা করবেন না। জনাব কামারুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসের অবমাননা করেন নি।

লোভনীয় মন্ত্রীর পদ ছেড়ে ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে যখন জনাব কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ গ্রহণ করেন, সেই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনাব কামারুজ্জামানের ত্যাগের বিষয়ে যে সমস্ত মন্তব্য করেছেন সেগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে মন্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো। বঙ্গবন্ধুর চিঠি -সদ্য পদত্যাগকারী বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এএইচএম কামারুজ্জামানের কাছে লিখিত এক পত্রে বলেছেন, ‘মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে জনগণের সেবার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ গ্রহণের জন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা সকলেরই অনুসরণ যোগ্য।’ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তাঁর দল ও দেশের জন্য আরও ত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি চির অনুগত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু চিঠিতে তাঁর নিজের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, ‘১৯৫৭ সালে আমিও মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলাম।’ চিঠিতে তিনি আরও বলেন ‘মন্ত্রী হিসেবে আপনি যে মহৎ, ত্যাগী এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রশংসা করে আমি আপনাকে ছোট করতে চাই না। আমি শুধু চাই জনগণের সেবা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি আপনার বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত সকলে অনুসরণ করুক।’ (বঙ্গবন্ধুর চিঠি, দৈনিক জনপদ, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, পৃ. ১)

এই চিঠির ভাষা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, জনাব কামারুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে কত বড়মাপের ত্যাগী নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর তিনি কত আস্থাভাজন ছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই, আওয়ামী লীগের যত নেতা ছিলেন, জনাব কামারুজ্জামান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ আস্থাভাজন নেতা। বঙ্গবন্ধুর আস্থা বা বিশ্বাসের অবমাননা জনাব কামারুজ্জামান কখনও করেন নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে যেমন ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বঙ্গবন্ধু নির্মম হত্যার শিকার হন, অপরদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনাব কামারুজ্জামান ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর তারিখে জেলের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনাব কামারুজ্জামান নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যার ফলে শেখ মুজিব-কামারুজ্জামান সম্পর্ক রক্তের আখরে গাথা পড়ে গেছে। এ সম্পর্ক চিরন্তন। জয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জয় শহীদ কামারুজ্জামান।