রাজধানীতে আগুনে ঝরলো ৪৬ প্রাণ

আপডেট: মার্চ ২, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দোষিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছেন। মৃত্যু সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯:৪৫ টার সময় বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ওই ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির ২য় তলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান।

প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১:৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।
মৃতদের পরিচয় শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ৪৬ মৃতদেহের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত করা হয় ৪১টির। এরমধ্যে ৪০ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া বাকি ছয় জনের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কেন বারবার ভয়াবহ সব অগ্নিকাণ্ড ঘটে? এসব দুর্ঘটনার পর কেন দোষিদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয় না? দুঃখজনক সত্য এই যে, কোনো ঘটনার জন্য কাউকে শাস্তি পেতে হয়নি। ফলে নির্বিকার নিয়মের বরখেলাপ চলতেই থাকে। শাস্তি না হওয়াটাই নতুন নতুন ঘটনা সৃষ্টি পথ তৈরি করে দেয়। বেইলি রোড়ের মর্মান্তিক ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নিমতলীতে ১২৪ জন মারা যাওয়ার পরে কী হয়েছে? কিছুই হয়নি। নিমতলীর পর চুড়িহাট্টার ঘটনা ঘটেছে, আবার বানানীতে আগুনে ৪৮ জন মারা যায়। এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতগুলো মানুষ মারা গেছে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বার বার একই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, এরপর কিছুদিন এ ঘটনার উত্তপ্ত থাকে তারপর আবার আগের মতই হয়ে যায়।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন। ঘটনা ঘটার পর একটু হইচই হয়, তারপর সব ঠিক হয়ে যায়। কোনো পরিবর্তন আসে না, কেহ সাজাও পান না। ফলে কেই বা নিয়মের তোয়াক্কা করবে।
গ্রিন কোজি কটেজও তেমনই নিয়মের ধার ধারেনি। ভবনটি আট তলা, তাই তারা ফায়ার এক্সিট রাখেনি। ১০ তলার উপরে রাখার নিয়ম। ভবনের একমাত্র সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার, দোকানের মালামাল রাখা ছিল। ফলে লোকজন বের হতে পারেনি। কিন্তু ভবনটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। জনসমাগম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে কেন এক্সিট রাখা হবে না? এ ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে।

গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের কর্তৃপক্ষকে তিনবার নোটিশ দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তার ভাস্যমতে, ওই ভবনে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিল। ভবন কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন- ভবন মালিককে বারবার নোটিশ দিতে হবে কেন? প্রথম নোটিশ, দেয়ার পরে জবাব না দিলে তখনই তো সংশ্লিষ্টদের তৎপর হয়ে ওঠা উচিৎ ছিল। কিন্তু তেমনটি হয় না। সিরিয়াসনেসের অভাব পরিলক্ষিত হয়।

বারবার এমন মৃত্যু দেশের মানুষ দেখতে চায় না। এটা আগুনে নিহতদের পরিবারের সাথে সাথে দেশের মানুষের ওপরও কম মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দোষিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তবেই এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।
বেইলি রোডের অুিগ্নকাণ্ডে নিহতদের প্রতি সোনার দেশ পরিবার গভীর শোক জানাই, শোক-সন্তপ্ত পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানাই।