রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। ইদের আগেপরে মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও এখন তা তীব্রতে রূপ নিয়েছে। যা আগামী কয়েকদিনে আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর এই তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী। যা বেশিরভাগই শিশু। ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ৬টার দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৫ শতাংশ। এদিন বিকেল তিনটার দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩০ শতাংশ।

এর আগের দিন মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার আগের দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে চলমান মাঝারি তাপপ্রবাহ আজ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নেয়। ১ এপ্রিল হতে রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু তাপ-প্রবাহ শুরু হয়। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়ে ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নেয়। তাপমাত্রা ৪০ ছাড়িয়ে তা তীব্র তাপপ্রবাহে পৌঁছাল।

রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত এসেছিল দেরিতে। চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে আগুন মুখো সূর্য। এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিলে না। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বোরো ধান চাষের সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বৃষ্টির পানি না পেয়ে প্রায় সব এলাকাতেই আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।

টানা তাপদাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। বাড়ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল দুদিন থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা এই গরমে হিট-স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগ হতে বাঁচতে সতর্কতামূলক-পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজীব খান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি-সেলসিয়াস। তিনি জানান, আগামী কয়েকদিন রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র তাপ-প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় তাপমাত্রা আরও বেশি হতে পারে বলেও তিনি জানান।

আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ধরা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতরের তাপমাত্রাকে। সে অনুযায়ী বুধবার রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহই ছিল। এই তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে নগরজীবন।

এদিকে অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০,২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, গরমে অনেক শিশু ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বরে ভুগছেন। এছাড়াও হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে এসব রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি মাত্রায় বাড়তে শুরু করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরইমধ্যে রোগীর চাপে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর জন্য শয্যা সংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলরত রাস্তার মেঝেতে থাকছেন রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৪৭ জন গরম জনিত রোগী ভর্তি রয়েছে। যারমধ্যে ৩২ জনই শিশু। যাদের অধিকাংশই ডায়রিয়া ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের (ইএমও) ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, এখনও আমাদের হাসপাতালে রোগীর পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসকের।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ