৯ ডিসেম্বর : সাঁথিয়া থানা হানাদারমুক্ত দিবস

আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩, ৪:১৪ অপরাহ্ণ


সাঁথিয়া(পাবনা)প্রতিনিধি :


৯ ডিসেম্বর (শনিবার) ঐতিহাসিক পাবনার সাঁথিয়া থানা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পাবনার সাঁথিয়া থানা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে এদিন বিজয় উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন।

সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে সারা দিয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য আ’লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর নির্দেশে সাঁথিয়া হাই স্কুলের তৎকালীন শিক্ষক রোস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কাশিনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আয়েজ উদ্দিন প্রমুখ বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ এলাকার ছাত্র সমাজ ও যুব তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।

যুদ্ধ অনিবার্য এটা আঁচ করতে পেরে স্বাধীনতাকামী বিশিষ্ট জনদের নির্দেশে তৎকালীন সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এলাকার ছাত্র যুব তরুণরা সংগঠিত হতে থাকে। সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে এরা প্রশিক্ষণ নিতেও শুরু করে। থানার তৎকালীন স্বাধীনতাকামী ওসি মোহাম্মদ আলী এ সময় সুকৌশলে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করেন।

সেনা সদস্য কাজী মোসলেম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন। ২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন রাবি’র ছাত্রনেতা ফজলুল হক, মকবুল হোসেন মকুল, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুসা, আবু হানিফ, মোসলেম উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, রউফ ,আব্দুল ওহাব, সোহরাব, , মতিনসহ যুব তরুণরা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম (চাদু), আব্দুস সামাদ, দারা হোসেন,শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহিদ হন। এ সময় সাঁথিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষকে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। এলাকার শত শত যুবতি ও নারীরা সম্ভ্রম হারান। সাঁথিয়ায় পাকসেনারা এলাকায় বহু লোকের ঘর-বাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং ব্যাপক লুটপাট চালায়।

৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে থানা সদর থেকে ২কি.মি. পশ্চিমে নন্দনপুরে পাক হানাদারদের সাথে চুড়ান্ত মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরদিন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পাক হানাদাররা আবার সাঁথিয়া আক্রমণের উদ্দেশ্যে আসতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের নন্দনপুর-জোড়গাছার মধ্যবর্তী ব্রিজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় এবং বাঙ্কার তৈরি করে সেখানেই তারা অবস্থান নেয়। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র বাধার মুখে পাক সেনারা আবার পিছু হটে চলে যায়।

পরদিন ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সাঁথিয়া থানাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা দেন।
সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড দিনটি যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। #

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ