অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকায় রাবি ছাত্রলীগের এক কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ২:৪৯ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক :সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী আল আমিন পিয়াস কে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আপনারা জানেন যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। আমরা নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে সিট বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি৷ সম্প্রতি শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, উক্ত ঘটনায় আল আমি পিয়াস সিট বাণিজ্যের চেষ্টা করেছিলো, যদিও সেখানে কোনো আর্থিক লেনদেন ঘটেনি। যেহেতু সে সিট বাণিজ্যের চেষ্টা করেছিল, সেহেতু তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। উক্ত ঘটনায় আল আমিন পিয়াসের সাথে অন্যকোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয়।

উল্লেখ্য, সিট বাণিজ্য বিষয়ে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন পিয়াসের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। ওই অডিওতে পিয়াসের বক্তব্যে সিট বাণিজ্য এবং টাকা ভাগাভাগির কিছু বিষয় ছিল।

অডিও রেকর্ডে পিয়াসকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা সিটের বিনিময়ে আট হাজার করে দিতে হবে।…এর আগে তো সাত-আট করেই চলত…আমরাও ওই আট (আট হাজার) করে তুলতেছি। কিন্তু তোর সিটের গ্যারান্টি আমি দিব। তোর সম্পূর্ণ দায়ভার আমার। আমরা যে কাজ করব, সেগুলো শিউর সিট।’
এভাবে টাকার বিনিময়ে সিট নিলে ‘সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা লাগবে না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায় তাঁকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রগ্রাম করতে হবে না। তবে ন্যাশনাল প্রগ্রামগুলোতে শুধু অ্যাটেন্ড করবি। আমার ক্ষেত্রে যেমন হইছে, আমি টাকা দিয়ে হলে উঠছি। কিন্তু পরে আমাকে পলিটিকস করতে হচ্ছে। তোর ক্ষেত্রে এ রকম হবে না।’

ছাত্রলীগকর্মী বলেন, ‘হলের রুমওয়ার্ক, ছেলেদের প্রোগ্রামে ডাকা এবং কোন সিট খালি হচ্ছে তা শাকিলের অধীনে তিনিই দেখাশোনা করেন।’
সিট বাণিজ্যের এ টাকার অংশ কয়েক ভাগে ভাগ হয় বলে জানা যায় অডিওর মাধ্যমে। পিয়াস বলেন, ‘শাকিল ভাই টাকা পাবে। আমি পাব না। শাখায় কিছু টাকা যাবে ‘মাল খাওয়ার’ জন্য। তবে শাকিল ভাই শেষে খুশি হয়ে আমাকে কিছু দিতে পারে।’

সিট বাণিজ্যের টাকা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে যায় কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবু ভাই নিজে খাবে না, তার আশপাশের যে ‘চ্যালা’ আছে তারা হালকা কিছু রাখবে। আর কিছু শাকিল ভাইয়ের কাছে থাকবে। তবে আমাকেও কিছু দিতে হবে। কারণ ভাই তো একা হল চালাচ্ছে না, আমিও চালাচ্ছি।’
তবে হলগুলোতে সিট বাণিজ্য না করার জন্য শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা আছে বলেও স্বীকার করেন আল আমিন পিয়াস। কথার এক পর্যায়ে টাকার বিনিময়ে হলে ওঠার বিষয়টি গোপন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এঘটনা তদন্তের জন্য গত ২৪ জানুয়ারি দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।