অবৈধ পুকুর খনন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

কৃষিজমি সংহার আর কত?

পুঠিয়ায় অবৈধভাবে পুকুর খনন করা মাটি রাস্তা দিয়ে বহন করে অন্যত্র বিক্রির অপরাধে দু’জনকে দুই লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের উজালপুরগ্রামে দু’জনকে এই অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পারিচালিত হয়। কিন্তু অবৈধ পুকুর খননের আধিক্য ব্যাপক হলেও ভ্রাম্যমান আদালত নিয়মিত পরিচালিত হয় না।

রাজশাহীসহ বরেন্দ্র ভূমির সর্বত্র অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। কৃষি জমি ধরন পরিবর্তনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিস্তর খবর প্রকাশিত হয় কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখন আবার কৌশল পরিবর্তন করে কারবারিদের মধ্যে রাতে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষণীয়। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে প্রশাসন ও স্থানীয়দের নজর এড়াতেই এই ধরনের কৌশল নেয়া হয়।

অবৈধ ও অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে কৃষক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রায়ই কৃষকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায় আন্দোলনে। পুকুর খনন নিয়ে সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে মারামারি- এমন কী হত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে থানা ও আদালতে মামলা মোকাদ্দমার পরিমাণ বাড়তেই আছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা এবং পুকুর খননের যন্ত্রপাতি জব্দ করলেও অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। নানা কৌশলে এবং প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে পুকুর খনন অব্যাহত আছে।
অবৈধ পুকুর খননে কৃষি জমির বিনাশ, কৃষকের দুর্ভোগ-বঞ্চনা, সামাজিক অস্থিরতারই সৃষ্টি হচ্ছে নাÑ পুকুর খননের মাটি পরিবহনকালে সরকারি সড়কসমূহের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

অবৈধ পুকুর খনন করে মৎস্য চাষের ফলে অর্থনৈতিক সাফল্য থাকলেও সেটা খুবই সাময়িক। এর দূরবর্তি ক্ষতির পরিমাণ সব সাফল্যকে এক সময় ম্লান করে দিবেÑ এমনই ভাবছেন পরিবেশবাদীরা। জীববৈচিত্র তো বটেই সেই সাথে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যে কোনো মূল্যে কৃষি জমিকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও সেটা কার্যত হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমনই যে, অবৈধ পুকুর খননকারীদের এক ধরনের দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। যে কারণেই জমির শ্রেণি বদলে অবৈধ পুকুর খনন অব্যাহতই থাকছে। পুকুর খননের মত একটি বড় পরিবর্তন কোনোভাবেই প্রশাসনের নজরদারি উপেক্ষা করা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। অথচ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো উপায়েই হোক অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ করতেই হবে। এটা ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষার স্বার্থেই প্রয়োজন।