আফগানে ব্যভিচারী নারীদের পাথর ছুড়ে হত্যার নিদান!

আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

বর্বর যুগে পশ্চাদপসরণ

সময়ের সাথে সাথে উপযোগী হয়ে উঠতে হয়। এটা ব্যক্তি-পরিবারের জন্য, আবার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্যও। সময়ের চাহিদা অগ্রাহ্য হলে সেখান থেকেই পশ্চাপদতার সূচনা হয়। প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হয়। নিষ্ঠুর- নির্মমতা সমাজকে ঘোরতর অমানবিক করে তোলে। সেই বোধ থেকেই ইসলাম ধর্মের পবিত্র ভূমি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে। রাষ্ট্রকে রক্ষণশীলতার মোড়ক থেকে বের করে গতিশীল ধারার বিন্যাস করতে হচ্ছে। এটাই যুগের চাহিদা। সমাজ বদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে না, তাকে চলতেই হয়।

যুগের চাহিদার সাথে নীতি-নৈতিকতার মৌলিকত্ব বজায় রেখেই বিশ্বের দেশসমূহ পাল্টাচ্ছে। বিশ্বের নতুন নতুন ধারণা ও ব্যবস্থার নিরীখেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হচ্ছে-দেশের অভ্যস্তরীণ ব্যবস্থাও পাল্টাতে হচ্ছে। কিন্তু আফগানিস্তান এর ব্যতিক্রমই শুধু নয়, কল্যাণকামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। যদিও দেশটির শাসক দল তালিবানের প্রতিশ্রতি ছিল তারা পাল্টাবেÑ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পশ্চাদপদ ব্যবস্থাকেই তারা আঁকড়ে ধরেছে।

সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর, আফগানিস্তানের তালিবান সরকার ঘোষণা দিয়েছে- ব্যভিচারের অপরাধে নারীদের বেত্রাঘাত করা হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। শনিবার (৩০ মার্চ) তালিবান প্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তার এই ঘোষণা দেশটির সরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়েছে। অথচ আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার ক্ষমতা দখলের পর প্রাথমিকভাবে তালিবান জানিয়েছিল নারীদের অধিকার হরণের অভিপ্রায় তাদের নেই।

কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে যায় বিশ শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথম দফার শাসনের মতোই এ বারও তাদের লক্ষ্য, ইসলামের নামে কট্টরপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ সংকুচিত করার পাশাপাশি পর্দাপ্রথা বাধ্যতামূলক করা এমনকি, একা বাড়ির বাইরে বার হওয়ার উপরেও নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে সেখানে। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানেই নারীরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার।

২০২১ সালের অগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনর্দখলের পরে স্বনির্ধারিত পাঁচ ‘সংযমের’ কথা বলেছিলেন তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ। কিন্তু আড়াই বছরের মধ্যেই তা ভুলে গিয়ে শরিয়তি আইন প্রবর্তনের অছিলায় নারীদের উপর প্রকাশ্য-নিপীড়নের নীতি কার্যকরে সক্রিয় হয়েছে দেশটি। পাঁচ সংযমের অন্যতম মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকেও ইতোমধ্যে সরে এসেছে তালিবার সরকার। আফিম চাষ এবং মাদক উৎপাদন তালিবান অর্থনীতির অন্যতম ‘স্তম্ভ’। বছর কয়েক আগের একটি রিপোর্ট বলছে, ড্রাগের ব্যবসা এবং চোরাচালান থেকে তালিবানের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

আড়াই বছরের অধিক সময় ধরে দেশটিতে তালিবানের ক্ষমতা চলমান থাকলেও সরকার এখন পর্যন্ত কোনো দেশের স্বীকৃতি লাভে সক্ষম হয় নি। কেননা তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। বরং দেশটি ধর্মের নামে অন্ধকার যুগের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। এর কুফল বইতে হচ্ছে দেশিটির নারীদের ভয়ঙ্করূপে।