ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ

আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

অফুরন্ত শক্তি ও সাহসের উৎস

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ঐতিহাসিক ওই ভাষণে তিনি জাতিকে সময়ের সন্ধিক্ষণে কী করণীয় ও তাদের কর্তব্য সম্পর্কে পথনির্দেশ দিয়েছিলেন। জাতি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাঁর সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ প্রতিপালনে জাতি অকাতরে প্রাণ দিয়েছে কিন্তু পিছু হটেনি। ঐক্যবদ্ধ জাতি বঙ্গবন্ধুকে অপরিহার্য নেতৃত্ব মেনে জনযুদ্ধ সংঘটিত করেছে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ৩০ লক্ষ বাঙালির জীবন ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেন। আর এ স্বাধীনতার মহান নায়ক, বঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষণ যা গণমানুষের কাছে সর্বাধিক শ্রুত হয়েছে এবং তা এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতে হবে। বাংলাদেশ ও বাঙালি সত্তা যতদিন থাকবে ততদিন বাঙিলির বুকে অনুরণিত হতেই থাকবে। কেননা বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণ এতোই তাৎপর্যপূর্ণ যার আবেদন কখনোই পুরানো হবার নয়। ৫৩ বছর ধরে জাতি বারবার ওই ভাষণ শুনছে, আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে নবরূপে উদ্বুদ্ধ করছে। নতুন প্রাণে দেশ-মাতৃকার আবেগ, জাতির শৌর্য-বীর্যের ধারণা, নিজেকে সাহসের পরাকাষ্টা অতিক্রমের শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছে। যে ভাষণে শক্তি ও সাহসের সঞ্চার ঘটে তা সবসময়ই নতুন নতুন ধারণার জন্ম দেয়, তা কখনোই নিঃশেষ হয় না। বরং জাগরিত হয়. উদ্দীপ্ত আলোয় উদ্ভাসিত করে চলে জাতির ভবিষ্যত। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ তেমনই অফুরন্ত শক্তি ও সাহসের উৎস।

এই সত্য আজ শুধু বাঙালি জাতির নয়Ñ পৃথিবীরও অহঙ্কার। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজ পৃথিবীর সম্পদ, সব জাতি-গোষ্ঠির শক্তি ও সাহসের উজ্জ্বল উদাহরণ। ইউনেস্কোর একটি উপদেষ্টা কমিটি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ অধ্যায়ের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেশের মানুষকে আপ্লুত করেছে, গৌরবান্বিত করেছে।

এ ধরনের ঐতিহ্যগুলি ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়Ñ সে তালিকায় এ ভাষণটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে ওই তালিকায় এখন ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়টি দেখানো হচ্ছে।

বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০২০ এর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষের দিন থেকেই মুজিববর্ষ উদযাপনের মহা-উৎসব শুরু হয়। ২০২২-এর মার্চ মাস পর্যন্ত তা বলবত থাকে। মুজিববর্ষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরো গভীর হয়েছে। এই গভীরতা একের পর এক গবেষণার মধ্য দিয়ে চর্চা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন প্রত্যয়ের সৃষ্টি করবে। সারা পৃথিবীর মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রামে, শক্তি ও সাহসে অনুপ্রাণিত-উৎসাহিত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অস্তিত্বের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সঞ্চারণের সূচনা করেছে। এই তো বাঙালি জাতির গৌরবগাথা, মানুষরূপে ব্যাপিয়া ওঠার অহঙ্কারের দিন। মানুষ হয়ে বাঁচার শপথের দিন আজ।