কুষ্ঠ রোগ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

রোগী ও সমাজকে সচেতনতার মাধ্যমে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

কুষ্ঠ রোগের নাম শুনলে আজও আতঙ্ক ছড়ায়। কারও এমন রোগ হয়েছে শুনলে আজও অনেকে সেই ব্যক্তির চারপাশে ঘেঁষতে চান না, এড়িয়ে থাকেন। কুষ্ঠ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক যন্ত্রণা তো থাকেই, পাশাপাশি ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারকে নানারকম সামাজিক এবং মানসিক সমস্যায় পড়তে হয়। মানসিক এই জন্য, কারণ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে অচ্ছূত হিসেবে গণ্য হন। এই রোগের কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ত্বকে পচন ধরে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে ২০২৪ সালে দিবসটি পালিত হয়েছে।

কুষ্ঠ একটি জীবাণুবাহিত সংক্রামণ। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত এবং উপযুক্ত চিকিৎসায় এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। তাই মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা কুষ্ঠের কারণ, এর উপসর্গ ও ক্রমধারা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। এর কার্যকর চিকিৎসাও আমাদের আয়ত্তে। বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হলেও এবং এটি নিয়মিত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও এখনো রোগটি জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে রয়ে গেছে। দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর মতে, দেশে প্রতি বছর ৩৫০০ থেকে ৪০০০ নতুন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে ৮-১০ শতাংশ সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীকালে পঙ্গু হয়ে যায়। জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচি দেশের ১২ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

এগুলো হলোÑ রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কুষ্ঠ রোগ হাতের চামড়ায় হয়ে থাকে। সংক্রমণের ফলে ত্বকে ক্ষত, স্নায়বিক ক্ষয় এবং শরীর দুর্বল এবং অসাড় বোধ হতে পারে। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, যে কোনো বয়সের ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আজকাল পরীক্ষাগার পরীক্ষা দ্বারা এই রোগ চিহ্নিত হয়। কুষ্ঠ রোগী ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে অনেকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করবেন না। বিছানা, পরিধেয় ও প্রসাধনী পৃথক রাখুন। হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করবেন। সেই সাথে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সতর্কভাবে চলাফেরা করুন। বিশেষ করে আগুন থেকে দূরে থাকুন।