গোমস্তাপুরের মাঠ জুড়ে হলুদের সমারোহ, সরকারি প্রণোদনায় অধিক জমিতে সরিষার আবাদ

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ৮:১১ অপরাহ্ণ


গোমস্তাপুর প্রতিনিধি:


চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মাঠগুলোতে হলুদের সমারোহ। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে উপজেলায় অধিক পরিমাণে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সারা মিলেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষকসহ উপজেলা কৃষি বিভাগ। গত বছর তুলনায় এবার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগ ৫ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে লক্ষ্যমাত্রা অধিক ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫০ জন।

জাতের মধ্যে সবচেয়ে বারি সরিষা-১৪ উপজেলায় বেশি চাষাবাদ করা হয়েছে। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিদেশ থেকে ভোজ্য তেলের আমদানী কমাতে সরকার বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষকদের মধ্যে। এর সুফল পাচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে চলতি মৌসুমে গোমস্তাপুর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মাঠগুলোতে চোখ পড়ছে হলুদের হলুদের সমারোহ । শীতের সিক্ত বাতাশে মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মাঠে। মাঠগুলোতে চোখ জুড়ানো সরিষা ফুলের অপরুপ দৃশ্য। কৃষকদের মধ্যে জেগেছে আনন্দের জোয়ার।

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, দুই একটি চাষাবাদ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপণ করা হয়ে থাকে। আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক লাগে কম। কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফল আসতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক সরিষা কেটে বোরো ধান চাষাবাদে নেমে পড়বে। ভাল ফলন ফলাতে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা।আবহাওয়া অনুকূল থাকলে জমিতে ভাল ফলন হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন। এবার উপজেলায় টরি সরিষা ৭- ৯৫০হেক্টর, বারি ১৪- ৪৩১০ হেক্টর, বারি ১৫- ১০ হেক্টর,বারি ১৭-৪৫০ হেক্টর,বারি ১৮- ১০৫ হেক্টর, বিনা ৯- ৪২৫ হেক্টর, বিনা ৪- ১৫০ হেক্টর, বারি ৯- ১০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী প্রণোদনা বীজ ও সার পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫০ জন।

রহনপুর এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি বিভাগ তাঁকে সরিষা চাষাবাদের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা করা হয়েছে। জমিতে বীজ বপণ করে সরিষা ভাল হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদে খরচ কম। উৎপাদন ভাল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সামনে বছর অতিরিক্ত জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

রহনপুর পৌর এলাকার কৃষক মামুন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে বারি-১৪ সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে । দেখা যাক কেমন উৎপাদন হবে। আশা করছি বাজারে সরিষা দাম ভাল থাকবে। পরিচর্চা করলে ভাল ফলন হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরোও জানান সরিষা উঠিয়ে ইরি ধান চাষাবাদ করবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে গোমস্তাপুর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৯৫০ জনকে প্রণোদনার বীজ ও রাসায়নিক দেয়া হয়েছে। সরকার তেলের ঘাটতি পূরনে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানা পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহিত করছেন। তিনি আরও বলেন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে স্বল্প মেয়াদী আমন ধান চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সরিষা চাষাবাদে খরচ হয় কম। সেচ ও সার লাগে অত্যান্ত কম। সরিষা পাতা উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা হয়। সরিষা কেটে কৃষকরা বোরো ধানও উৎপাদন করতে পারবে বলে তিনি জানান।