জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস, ক্ষুব্ধ দেশের মানুষ। শিক্ষার্থীরা তুমুল বিক্ষোভ জানাচ্ছে। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটক রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্তদের চার জনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার আঁচ সারা দেশজুড়েই। বিবেকবান প্রতিটি মানুষকেই এই ঘটনা ক্ষুব্ধ করেছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দ্বারা পৈশাচিক ঘটনায় বিমূঢ়-বিহ্বল তারা। একই সাথে বারবার এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব হচ্ছেটা কী? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিরবতা কিংবা ব্যবস্থা না নিতে পারার ব্যর্থতাও কি এ ধরনের জঘন্য অপরাধকে বৈধতা দিচ্ছে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার জড়িতদের শাস্তি ও নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলা আন্দোলন তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে তেমনই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মানববন্ধন থেকে বলা হয়, ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক উপাচার্য নির্বিকার থাকেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই; আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, একজন ধর্ষক মানসিকতার ছাত্র কীভাবে ছাত্রলীগের নেতা হতে পারে? কারা তাকে কীভাবে পদায়ন করলো? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় এমন পাশবিক কাণ্ড কীভাবে সম্ভব? তদন্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া জরুরী। নইলে সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি ধর্ষকদের পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেছেন তাদের কুলাঙ্গার সন্তানদের অস্বীকার করতে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এর মধ্যে রয়েছেন হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফের মতো কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কর্তপক্ষের ব্যর্থতাকেই দায়ি করেছেন।

তাঁরা বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে আরো ঘটনা ঘটেছে। কোনো ধর্ষণের তদন্ত বা সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেনি। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

ইউজিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া এসব অপরাধের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধীদের প্রশ্রয়ের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়নি।”

এসব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই বলে দেয় যে, জাবি উপাচার্য তার দায়িত্বশীল পদে আসীন থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার পদত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। আর অভিযুক্তদের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধের যে বিধান তা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবেÑ এটাই প্রত্যাশিত। অপরাধীরা দায়মুক্তি পেলে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বলে কিছু আর থাকবে না।