তামাকজনিত রোগে বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

তামাক আইন যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ বলছে, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ৩১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।

হার্ট ফাউন্ডেশন প্রদত্ত তথ্যমতে, তামাকজনিত রোগে কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি এক সেমিনারে বলা হয়, দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ধূমপান বা তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৬১ হাজার, যারা কখনো ধূমপান করেনি। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ প্রত্যক্ষ ব্যয় হয় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর অকালমৃত্যু ও কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতার যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ ২২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফুসফুস ও শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী রোগ বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য দিচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে ৭৫ শতাংশের বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএআরসি) জানিয়েছে, ২০১২ সালে বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক এক মিলিয়ন ও ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন। এক দশক পরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২০ মিলিয়ন ও ৯ দশমিক ৭ মিলিয়নে। সংস্থাটি এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে, যা ২০২২ সালের চেয়ে অন্তত ৭৭ শতাংশ বেশি।

আইএআরসি জানিয়েছে, তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন ও স্থূলতা ক্যানসার রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, তামাকজনিত এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ৬টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে ফাউন্ডেশন।

দেশে হৃদরোগ বাড়ছে। গবেষকরা এসবের সঙ্গে তামাকের সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছেন। এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের চিকিৎসায় রাষ্ট্রকেও বিপুল ব্যয় করতে হয়। তার পরও সরকার কেন তামাকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তামাক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।